নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ এর ১ ধারায় ছিল ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড সংযুক্ত করা হয়। আইনে বলা হয়েছে ধর্ষণের শিকার শিশু ও নারীকে দল বেধে ধর্ষণ করা হলে, আহত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে।
আদালতের রায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আইন সংশোধনের পর ধর্ষণের মামলায় গেল ৫ ফেব্রুয়ারি সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ১০ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কমলাপুর ট্রেনে প্রেমিকাকে ধর্ষণের দায়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি মারুফ হাসান নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
ঝিনাইদহে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে ২০২৩ সালের ১৫ মে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে। ধর্ষণের মামলায় বিগত ১১ বছরে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে।
তবে রায় কার্যকরে ধীরগতি থাকলেও সমাজে থেমে নেই নিকৃষ্টতম এই অপরাধ। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই দিনে গড়ে ১২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে।
আর গত আট বছরে ৩ হাজার ৪৩৮ টি শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩৯ জনের বয়স ছয় বছরের কম।
অপরাধের তীব্রতা বিবেচনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনী ধর্ষণের বিচারে কতটা সহায়ক হবে, এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নতুন প্রস্তাবগুলো ধর্ষককে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের কারণে অধিকাংশ সময় মামলা ঝুলে যায়। এমন অনেক বিষয় থাকে যেখানে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন পরে না। যেমন এমন একজনকে কেউ হাতে নাতে ধরে ফেললো সেখানে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন নেই।’
আইনে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে ১৮০ দিনে বিচার শেষ করার কথা রয়েছে। আর ধর্ষক বা অপরাধী হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই বিচার করার পক্ষে মত দেন আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সালমা আলী বলেন, ‘প্রলোভন দেখিয়ে আবার কী? প্রলোভন দেখিয়ে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড এসব থাকা উচিত না।’
ধর্ষণের মত অপরাধ অল্প সময়ে তদন্ত শেষ করে বিচার করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কতটা সহজ। এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, তদন্ত যত দ্রুত ও নির্ভুল হবে ততই অপরাধীর বিচার সহজ হবে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ‘খুব দ্রুত বিচার করলেই যে ন্যায় বিচার হবে এইটা ঠিক না। যদি বিচারের সময় বেশি লাগে তার জন্য অবিচার হয়ে যাবে এইটাও ঠিক না। বিচারটা যথাযথ হতে হবে। আমাদের লক্ষ থাকে প্রকৃত অপরাধীকে কোর্টে আনা।’
ধর্ষণ মামলায় অপরাধীর জামিন না দেয়ার পক্ষে মত রাষ্ট্রপক্ষের।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুল হক মিলন বলেন, ‘খুবই চেষ্টা করি কোনোভাবেই সে যেন জামিন না পায়।’
আইন সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি বছরের দুই মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৬ জন। যার মধ্যে ৪৪ জনই শিশু।