এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রূপায়ণ দেব, থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) এনামুল হক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মাস আগে উপজেলা ও পাশের আলীকদম উপজেলা থেকে ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে বসতি শুরু করেন। পাড়ার নাম দেন পূর্ব বেতছড়া পাড়া। বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব পরিবারের লোকজন পাশের টংগঝিরি পাড়ার গীর্জায় প্রার্থনা করতে যান। এ ফাঁকে কে বা কারা পাড়ার ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এর আগে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাড়ার বাসিন্দা গুংগা মনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে স্টিফেন ত্রিপুরাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে লামা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, গুংগা মনি ত্রিপুরা, সিয়ান্দ্র ত্রিপুরা, চন্দ্র মনি ত্রিপুরা, বিদ্যাচন্দ্র ত্রিপুরা, অজারাম ত্রিপুরা, রুমানিক ত্রিপুরা, গ্রেন ত্রিপুরা, বিজয় ত্রিপুরা, মার্ঝেল ত্রিপুরা, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা, গুংগারাং ত্রিপুরা, তিফরাম ত্রিপুরা, অনসারাই ত্রিপুরা, জানালি ত্রিপুরা, তারাসিং ত্রিপুরা, বাষিচন্দ্র ত্রিপুরা ও ওবদিয় ত্রিপুরা। ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি পলাতক বেনজির আহমেদের একটি বাগান বাড়ি ছিল, যা এসপির বাগান নামে পরিচিত। বেনজির আহমেদের সেই জায়গায় বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু ত্রিপুরা পরিবার গিয়ে ছোট ছোট কাঁচা জুমঘর করে বসবাস শুরু করেন। ওই জায়গার দখল কর্তৃত্ব নিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন একটি মহল।
এ বিষয়ে পাড়ার বাসিন্দা গুংগা মনি ত্রিপুরা বলেন, ‘গত একমাস আগে স্টিফেন ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকজন দল তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন, দাবিকৃত অর্থ না দিলে পাড়াবাসীকে হুমকিও দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। মূলত তারাই সুযোগ বুঝে আমাদের পাড়ার ১৭টি বসতঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত স্টিফেনরা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
এ বিষয়ে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) এনামুল হক বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার ২৫ (ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি, অভিযোগ করলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রূপায়ণ দেব জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের চাল, ডাল, তেল ও শীত নিবারণের জন্য কম্বল প্রদান করা হয়েছে।