রাত আড়াইটা। মাস্ক ও চাদর পড়ে তিন ব্যক্তি হেঁটে আসছেন ধানমন্ডি ৮ এর রাস্তা ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৌড়ে বেড়িয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। প্রাথমিক ভাবে ডাকাতি বলে মনে হলেও ঘর থেকে খোয়া যায়নি কিছুই। শুধু প্রবাসী ডাক্তার আবদুর রশিদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সটকে পড়ে অপরাধীরা। সেই ঘটনায় মারা যান প্রবাসী ডাক্তার আবদুর রশিদ।
কী হয়েছিল সেদিন রাতে? পাশের বাড়ির মানুষের ডাক চিৎকার শুনে এগিয়ে আসে অনেকেই। উপরে থাকা ভাড়াটিয়ারাও জানালেন সেদিনের সেই ঘটনা। বাড়ির ভাড়াটিয়া বলেন, ‘চিল্লাচিল্লি শুনে বের হয়ে উপরের গিয়ে ঢুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থা ছিলেন আঙ্কেল,আন্টি পানি ঢালছিলেন।’
কেন এই হত্যাকাণ্ডে তার সুরাহা এখনও পুলিশ না করতে পারলেও জমি নিয়ে বিরোধের কথা জানালেন প্রতিবেশীরা।
এতো গেল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা একটু ভিন্ন । বাবার হাতে দুই ছেলে খুন। কারণটা অর্থকষ্ট।
এবার লালবাগ থেকে পরিকল্পিত ভাবে ৮ মাসের শিশু অপহরণের চিত্র তুলে আনবো আমরা। কেন অপহরণ করা হয়েছিল ছোট্ট শিশুটিকে। র্যাব বলছে, শিশুটিকে জিম্মি করে অর্থ আদায় ছিল মূল উদ্দেশ্য।
শুধু এই অপরাধ নয়, সরকারি বেসরকারি অফিসে শো-ডাউন দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনা তো আছেই। উদাহরণ হিসেবে আজিমপুরের মাতৃসদন হাসপাতাল। অফিসের আয়া খোলামেলা ভাবেই হুমকি দিয়ে গেলেন হাসপাতালটির প্রধানকে। কোথায় পাবে বিচার। জীবন শঙ্কা প্রকট এখানে।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. সেহেলী নার্গিস বলেন, ‘সে এসে খুব হুলুস্থুল কাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি তাকে অনেকভাবে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম। মূলত সেদিন আমার এখানকার বদলি আদেশাধীন এক আয়া ফরিদা এসেই দাবি করে যে তার আবেদন তখনই গ্রহণ করতে হবে।’
শুধু এই ঘটনা নয় বাড়ি দখল, ছিনতাই , চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা তো আছেই। থানায় ঘুরে দেখা গেল কত মানুষের অসহায় অবস্থা।
গণঅভ্যুত্থানের পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন এই ব্যক্তি। দেশে থাকা এক ভাই কীভাবে মারা গেছে তার কাছে নেই তারও সদ উত্তর। কানাডা প্রবাসী আরেক ভাই জীবন ভয়ে দেশে আসেন না। শুধু জানেন ফিরে পেতে হবে পৈত্রিক সম্পত্তি।
পুলিশ সূত্র বলছে, রাজধানীতে দুই মাসে ৬৮ টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর এই ৬৮ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কেবল মোহাম্মদপুর থানায় হয়েছে ১০ টি হত্যা কাণ্ডের ঘটনা।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসে ৬৮টি খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে যা ছিল ৪৭ এবং অক্টোবরে তা নেমে এসেছে ২১ হয়েছে।’
একেক হত্যাকাণ্ডের পেছনে এক এক ঘটনা। তবে ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকার মধ্য থেকে ৮১ জন ও ঢাকার বাহির থেকে ১৭৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘ কী কারণে এই হত্যাকাণ্ডগুলো হচ্ছে এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে মূলত সামাজিক, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক কারণে এসব হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক কারণের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এসব হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা অপরাধীদের পার পাওয়ার প্রবণতা তৈরি করছে। তাই পেশি শক্তিকেই বেছে নিচ্ছে অনেকে দাবি সমাজ বিশ্লেষকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি মানুষকে অপরাধমুখী করছে, সেগুলোকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অপরাধ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে শত্রুতার জায়গাগুলো আরো বেড়ে উঠবে।’
হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা থামাতে কঠোর শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলে মনে করে অপরাধ বিশ্লেষকরা।