মৎস্য অবতরণের সময় বাড়ানোর দাবিতে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ছবি
কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ছবি | ছবি: এখন টিভি
0

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ অবতরণে সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বাড়িয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত করার দাবিতে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা ও পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে জেলে ও ব্যবসায়ীরা। এতে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি মৌসুমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে। তবে বিএফডিসি বলছে, হ্রদের মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই মৎস্য অবতরণের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিঠা পানির কৃত্রিম জলাধার ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরেন ২৭ হাজার জেলে, ৫০০ ব্যবসায়ী ও পাঁচ হাজার শ্রমিক।

তবে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ অবতরণে সময় বাড়ানো দাবিতে আজ (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে মাছ ধরা ও পরিবহন বন্ধ করে দেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা মৎস্য অবতরণে সরকারি সময়সীমা বেধে দিয়েছেন। তবে বিকেলে তিনঘণ্টা বিরতি দিয়ে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন নতুন করে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, রোজকার সেই চিরচেনা কর্মচাঞ্চল্য নেই। মাছ ধরা ও পরিবহন বন্ধ থাকায় সুনসান নীরবতা ঘাটজুড়েই। অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও।

তবে আকস্মিক এ মাছ ধরা বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন নিতে হলো, সে বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন ব্যবসায়ী ও জেলে নেতারা।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যদি রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সময় দেন, আমরা রাতে মাছগুলো নিয়ে আসলে কোয়ালিটিও মেইনটেইন হবে, জেলেও টাকা পাবে। সরকারও রাজস্ব পাবে, আমরা ব্যবসাও করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘দুইমাস আগে বিএফডিসিতে আবেদন জানিয়েছি। সেখান থেকে সাড়ে নয়টা সময় বেধে দিয়েছে। কিন্তু এটাতে হচ্ছে না। এজন্য আমরা আজ (বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে মাছ ধরা ও পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছি। সময় বাড়ানোর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাছ ধরা ও পরিবহন বন্ধ থাকবে।’

আরও পড়ুন:

মৎস্য ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল বলেন, ‘বিএফডিসির বেধে দেয়া স্বল্প সময় সীমার মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে মাছের গুনগত মান নষ্ট ও পচে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলেরাও মাছের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাছ বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।’

জেলেদের নেতা মো. ইলিয়াস ও মো. হেলাল বলেন, ‘মাননীয় উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক ও বিএফডিসির কাছে আমরা সময় বাড়ানোর আবেদন জানাচ্ছি। যাতে যখনকার তখনই শুল্কায়ন করে, জেলেরা যেন মাছের ন্যায্য মূল্য পায়।’

বিএফডিসির তথ্য বলছে, কাপ্তাই হ্রদে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আকার ও প্রজাতি ভেদে এসব মাছের শুল্কায়ন বাবদ কেজিপ্রতি ২১ থেকে ৪৩ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করে সরকার। 

গেলো অর্থবছরে ৮ মাসে ৮ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন মাছের শুল্কায়ন বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকার বেশি। দিনের হিসেবে যা গড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, ‘হ্রদের মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই মৎস্য অবতরণের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ওভার ফিশিংয়ের কারণে কাপ্তাই লেকের মাছ অতিরিক্ত ধরা পড়ে গেলে দীর্ঘ সময় আমরা মাছ পাবো না।’ 

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমন হতে পারে যে, অবতরণের জন্য পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে না। মাছের এই ঘাটতিতে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে। এই সামগ্রিক বিষয় মাথায় রেখেই অবতরণের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হয়েছে।’ 

এসএইচ