ঋণের ফাঁদে মেঘনা–গোমতী চরাঞ্চলবাসীর জীবন

শ্রমিকরা কাজ করছেন
শ্রমিকরা কাজ করছেন | ছবি: এখন টিভি
0

ঋণের জালে আটকে আছে কুমিল্লার মেঘনা ও গোমতী নদীর চরাঞ্চলে মানুষের জীবন। ঘনঘন পেশা বদলেও উচ্চহারে ঋণকেন্দ্রিক জীবন থেকে মিলছে না মুক্তি। ঋণের দায় নিয়েই তাই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা পিছিয়ে আছেন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা আর স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও। যদিও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কাজ করে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

কুমিল্লার মেঘনা ও গোমতী নদীর চরাঞ্চলে মানুষের আর্থিক নির্ভরশীলতা উচ্চহারে ঋণকেন্দ্রিক। ফলে ঘনঘন পেশা বদল করেও ঋণচক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। ঋণের দায়ে অনেকেই ছেড়েছেন এলাকা।

ভরদুপুরে নৌকায় বসে জাল মেরামত করছেন দাউদকান্দির গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের জেলেরা। গোমতী নদীর চরের এ গ্রামে শতাধিক জেলে পরিবারের বাস। নদীকেন্দ্রিক রুটি-রুজি তাদের। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নৌকা আর জাল নিয়ে নদীতে নামেন জেলেরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জেলেরা জানান, কারখানা ও ফসলের কীটনাশকের প্রভাবে নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ নেই।

জেলেরা জানান, তাদের এখন কোনো কাজ নেই। তাদের কাজ করতে হলে অন্যদের খেতে খামারে গিয়ে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে বর্ষা আসলে নদীতে পানি বেড়ে যায়, তখন চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।

দাউদকান্দি ও মেঘনার চরাঞ্চল অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। ফলে নেই জনজীবনের তেমন অগ্রগতি। জেলেসহ নিম্ন আয়ের চরবাসীর অধিকাংশই ঋণ করে জীবিকার প্রয়োজন মেটান। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন।

আরও পড়ুন:

চরবাসীরা জানান, তারা ঋণের ওপর চলেন। আবার অনেকে কৃষি ঋণ তুলেন পরে শোধ করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে চলেও যান।

শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক সেবা থেকেও পিছিয়ে আছে চরবাসী। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতেই শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ ঝরে যায়।

অভিভাবকরা জানান, প্রাইমারির পড় শেষ করে হাইস্কুলে গেলে তারা সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগার করতে পারেন না। ফলে তারা শিক্ষা থেকেও পিছিয়ে পড়ছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলার গোমতী ও মেঘনা নদীর মাঝে চরগুলোতে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। গবেষকদের মতে, মেঘনা গোমতীর রিভার বেসিনে চরের মানুষের মূল পেশা সারাবছর নির্ধারিত নয়। ফলে উচ্চহারে ঋণগ্রহণের কারণে তারা ঋণচক্রে পড়ে গেছেন। ফলে অনেকেই ঘনঘন পেশা পরিবর্তন করছেন।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি যুগ্ম পরিচালক রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘সারা বছর তাদের কাছে পেশা না থাকার কারণে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ফলে এ চরাঞ্চলে বিশ কিছু ঋণ সংস্থা কাজ করছেন। উচ্চহারে এ ঋণ গ্রহণের কারণে এখানকার মানুষ একটি ঋণের সাইকেলে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন।’

শিসউক নির্বাহী পরিচালক সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ বলেন, ‘সেখানে সম্ভাবনার যে জায়গাগুলো আছে মৎস্য, ফসল সব ক্ষেত্রেই কালেক্টিভ ইনেসিয়েটিভ কীভাবে নিতে পারি, কীভাবে সেখানে প্রমোট করতে পারি আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব।’

ভাগ্য পরিবর্তনে নদীর পাশে ফসলের মাঠে ব্যস্ততা কিষাণ কিষাণীর। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে এ চরের মানুষই বদলে দেবে নদীনির্ভর জনপদের চিত্র।

এফএস