কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে তোলপাড়, ফল স্থগিত

কুষ্টিয়ার বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা
কুষ্টিয়ার বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা | ছবি: এখন টিভি
0

কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও’র বাসা থেকে বের হচ্ছেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী—এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই পরিস্থিতির মুখে সিভিল সার্জন পরীক্ষার ফল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাসায় বসেই পরীক্ষা। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর টালিপাড়া এলাকার ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমামের বাসায় ভোররাত থেকেই জমায়েত কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। সূত্র বলছে, রাত ৪টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের আনা হয় ওই বাসায়। সকাল গড়াতেই শুরু হয় অঘোষিত ‘নিয়োগ পরীক্ষা’।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়— হাতে ফাইল, কাগজপত্র আর খাতা নিয়ে ওই বাসা থেকে বের হচ্ছেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখেই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। প্রশ্ন করতেই দেন দৌড়। অনেক চেষ্টার পরেও কথা বলেননি তারা।

দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা। গত (শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে জেলার ১৪টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা।

সাতটি ক্যাটাগরিতে ১১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন করেন ১৬হাজার ৭৮৯জন। স্বাস্থ্য বিভাগের সাতটি পদের মধ্যে রয়েছে—স্বাস্থ্য সহকারী ৯৭টি, পরিসংখ্যানবিদ তিনটি, কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান একটি, স্টোর কিপার চারটি, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর একটি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পাঁচটি এবং ড্রাইভার চারটি পদ। কিন্তু পরীক্ষার আগেই বাসায় বসে পরীক্ষা দেয়ার এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে— নিয়োগটা কি সত্যিই স্বচ্ছ ছিলো?

পরীক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। পরীক্ষা শেষ করে এসে দেখছি দুর্নীতি হয়েছে।’

অন্যআরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে পরীক্ষা দিলাম। এখন দেখছি পরীক্ষা দেয়ার আগেই অনেকের চাকরি হয়ে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

অভিযুক্ত আরএমওর বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্সে করে চাকরি প্রার্থীদের এনে অঘোষিত নিয়োগ পরীক্ষা চলায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। এরই প্রতিবাদে গত শনিবার দুপুরে সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার কণ্ঠে একটাই দাবি— ‘এই নিয়োগ বাতিল করতে হবে, দোষীদের বিচার চাই!’

ছাত্র-জনতারা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই তারা একধরনের গুঞ্জন শুনে আসছিলেন। তবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় তারা কিছু করতে পারেননি।

ঘটনাটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে দাবি আরএমওর।

কুষ্টিয়ার ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. হোসেন ইমাম বলেন, ‘দিনটি শুক্রবার ছিলো। আমি ওইদিন একটু দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠি। হঠাৎ আমার মিসেস ডেকে বললো বাহিরে তুমুল ঝামেলা চলছিলো, পরে আমাকে আর ডাকেনি। আমি দুই তালাতে থাকি। নিচতলায় মেস। মেসে কী হয়, কী ঘটনা ঘটে, সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. শেখ মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘কার্যালয়ে একটি নিদিষ্ট রুমে পরীক্ষা হয়েছে। ওই রুম থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয়নি। আমরা ফুল মনিটরিং করেছি। ওইদিনই আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিয়েছি।’

এফএস