কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ কুমিল্লাবাসী; অভিযানেও দমানো যাচ্ছে না

কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া
কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া | ছবি: এখন টিভি
0

কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই জড়িয়ে পড়ছে নানা গ্রুপে। নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনে প্রায়ই প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় কেপে উঠছে নগরী। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্রসহ সর্বত্র। অভিযানেও দমানো যাচ্ছে না গ্যাং কালচার। প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের দিনে-দুপুরে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, চারপাশে আতঙ্কিত মানুষজন। সম্প্রতি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সামনে অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের দুটি গ্রুপের মহড়ায় আতঙ্ক ছড়ায় নগরীতে। পরে আটক হয় গ্যাংয়ের প্রায় ২০ সদস্য।

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শহরে আধিপত্য বিস্তার, লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং প্রতিপক্ষকে দেখাতে প্রায়ই ফিল্মিস্টাইলে চলে কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া। এদের দ্বারা বাড়ছে খুনের ঘটনাও। গ্যাং সদস্যদের মধ্যে ছিন্নমূল কিশোর ছাড়াও যুক্ত হচ্ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরাও। অপরাধপ্রবণতায় যোগ হচ্ছে সহজলভ্য মাদক, প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণহীন সামাজিক পরিবেশ।

একজন অভিভাবক বলেন, ‘অন্যায় করলে যে রেহাই পাওয়া যায়, কোনো বিচার হয় না, আমিত্ববোধ এটি প্রদর্শনের একটি জায়গা হলো কিশোর গ্যাং। তারা যা ইচ্ছা তাই করে, বিচার হয় না দেশে।’

অন্যআরেক অভিভাবক বলেন, ‘প্রশাসনের ভূমিকা আরও কঠোর হতে হবে। আরও কঠোর না হলে আমরা কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার বন্ধ করতে পারব না।’

তবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ও কিশোর গ্যাংয়ের পেছনের কারণ হিসেবে পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকরা। বলছেন, সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলার মাঠ কমে যাওয়ায় কিশোর মনে নতুন কিছু দোলা দিচ্ছে। যা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পেশীশক্তি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

কুমিল্লা সুশাসনের জন্য নাগরিক সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান টিটু বলেন, ‘যারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তারা কারা? আরও গভীরে গেলে দেখা যায় তাদের কোনো না কোনো মাস্টার আছে। রাজনৈতিক মাস্টার রয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এ কিশোর গ্যাং বিকশিত হবেই। এর সমাধানের জন্য একটি ক্যালেক্টিভ ম্যাকানিজম দরকার। এর জন্য সকল শ্রেণি-পেশার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একটি আইডেন্টিক্যাল ফিলোসোফিক্যাল প্লাটফর্মে চলে আসতে হবে।’

কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা এডহক কমিটি সদস্য মাহির তাজওয়ার ওহী বলেন, ‘আমরা আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারিনি। আমরা এখনো মনে করছি রাজনীতি পেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে রাজনীতিবিদরা তাদের শক্তির জানান দিতে কিশোর গ্যাংদের আশ্রয় দিচ্ছেন। রাজনীতিবিদরা যতদিন প্রশাসনের সঙ্গে ঐকমতে না আসে ততোদিন আমাদের পক্ষে কিশোর গ্যাংকে নির্মূল করা সম্ভব হবে না।’

কিশোর গ্যাংয়ের মাথাচাড়া নিয়ে বিচলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। নিয়মিত টহল ও গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি বলছেন কর্মকর্তারা।

কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আইনগতভাবে চেষ্টা করছি। শুধু কিশোর অপরাধী না তাদের পেছনে কারা আছে তাদের আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি এখানে অভিভাবকদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে, তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে কি করছে দেখার। আমরা চেষ্টা করছি অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য।’

র‌্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, ‘বাইকের একটি গ্যাং রয়েছে। যারা প্রায়ই মহড়া দিয়ে থাকে। সেই গ্যাংকে আমি গোমতীর তীরে ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছাড়া হয়েছিলো। এ কিশোর গ্যাংয়ের বিপক্ষে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুতই আমরা আরও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’

সামাজিক মাধ্যমে ‘হিরোইজম’ দেখানোর মানসিকতা ও পারিবারিক নজরদারির অভাবে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অপরাধ আরও বাড়বে বলছেন বিশ্লেষকরা

এফএস