সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবাহ গ্রামের দরিদ্র ঘরের যুবক তরিকুল। ভালো আয়ের আশায় স্থানীয় প্রবাসীর মাধ্যমে জমি বিক্রি করে আর ধারদেনা করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু গিয়ে জানতে পারেন, তাকে নেয়া হয়েছে টুরিস্ট ভিসায়। ছিলো না আকামা বা কোনো বৈধ কাগজপত্র।
ভুক্তভোগী তরিকুল বলেন, ‘দালালের নাম আজিজুল রহমান। আর নারী ছিলেন সুফিয়া বেগম। আমাকে সেখানে ১৮ দিনের মতো রেখেছে। তবে কোনো কাজ দেয়নি, খাবারও দেয়নি। পরে সেখান থেকে আমাকে পুলিশ ধরেছে, তারা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
শুধু এ পরিবার নয়, দালাল চক্রের কবলে পড়ে এ গ্রামের অন্তত ১৫টি পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এদেরই একজন জাকির হোসেন। জাকিরের পরিবার জানায়, সুফিয়া বেগম নামে এক মহিলা দালালের মাধ্যমে মূল দালাল আজিজুলকে তিন লাখ টাকা দেন তারা। দালাল মূল পাসপোর্ট রেখে নকল পাসপোর্টে সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে কোনো কাজ না দিয়ে মরুভূমিতে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। পরে দেশে ফেরানোর কথা বলে আরও দেড় লাখ টাকার চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় চক্রটি। এরপর থেকেই জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, আর টাকার জন্য দালালরা এখন পরিবারটিকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেনের মা বলেন, ‘লোভ দেখিয়ে তারা আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে। আমি তিন লাখ টাকা দিয়েছিলাম।’
জাকিরের স্ত্রী বলেন, ‘স্ট্যাম্প করে নিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে একটি চেকও নিয়েছে। এখন তারা আমাদের মামলা দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
জানা যায়, আজিজুল নামে এক সৌদি প্রবাসী এ প্রতারণা চক্রের মূল হোতা। ভাগবাহ গ্রামের আজিজুল ইসলাম বর্তমানে পাটকেলঘাটা এলাকায় বসবাস করছে। সে সুফিয়া বেগমসহ একাধিক মহিলা দালালের মাধ্যমে নতুন বিদেশগামীদের ফাঁদে ফেলছে। মামলার আসামিসহ শারীরিকভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের জন্যও তৈরি করছে নকল পাসপোর্ট।
সাতক্ষীরার মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান অভিযুক্ত আজিজুল আসলাম বলেন, ‘তার মেডিকেল রিপোর্টে রক্তে জন্ডিস ছিলো। তাই তাকে আনফিট বলে বাদ দেয়া হয়েছিলো। ওই পাসপোর্ট নিয়ে গেলে তাকে প্রতিবার বাদ দেয়া হয়েছে।’
একজন ব্যক্তির দুটি পাসপোর্ট বিষয়ে অভিযুক্ত আজিজুল বলেন, ‘ওদের একটি সিস্টেম ছিলো। এটাই আমাদের অপরাধ। তখন আমি তো বিদেশে ছিলাম।’
সাতক্ষীরার মানবপাচারকারী চক্রের সহযোগী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘যা গেছে বাকিগুলো যাবে। তাই আমি বলেছি তুমি জামিনে থাকো।’
এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি। তবে আইনগত প্রতিকার চাইলে তারা ব্যবস্থা নেবেন জানান, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা সহকারী পরিচালক জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আমাদের ২ হাজার ২৭৮টি বৈধ রিপোর্টিং এজেন্সি আছে। যেকোনো বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে যান, এর পরেও যদি প্রতারণার শিকার হন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছে অভিযোগ করুন আমরা প্রতিকার দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার (তালা সার্কেল) হাসানুর রহমান বলেন, ‘এমন অভিযোগ সাধারণত খুব একটা আমাদের কাছে আসে না। থানায় যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কর্মসংস্থান সংকটে থাকা সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার যুবক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন জীবিকার সন্ধানে। তবে সেই সুযোগকেই এখন ব্যবহার করছে দালাল চক্র। স্থানীয়রা বলছেন, বিদেশগামী শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়ানো এবং দালাল চক্র দমনে প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন মত স্থানীয়দের।





