স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আকাশে কালো ধোঁয়া দেখে স্থানীয়রা ছুটোছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে সাধুপাড়া এলাকায় আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
আগুনের তীব্রতা ও পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন ফায়ার ফাইটাররা। তবে ততক্ষণে কাপড় ব্যবসায়ী ধনঞ্জয় সাহা ও গোবিন্দ কুমার সাহার বাড়ির আসবাবপত্র, জামাকাপড়, বই-খাতা ও প্রয়োজনীয় সবকিছুই পুড়ে যায়।
আগুনের তীব্রতায় পাশের সঞ্জয় সরকারের নতুন বাসার প্লাস্টিকের থাইসিলিং, লাইট, ফ্যান, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। স্থানীয়রা ভিড় করেন সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুল মাঠে।
প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে একটি বাড়ির বেশ কয়েকটি ঘর সম্পূর্ণরূপে এবং পাশের আরেকটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য দুর্গা রানী সাহা পূজা সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেছে তার বই-খাতা ও প্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।
দুর্গা রানী সাহা পূজা বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমরা পাশের বাসায় কালীপূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম আগুন লেগেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে। আমি মাকে বললাম দাদুকে দ্রুত বের করে আনতে, কারণ দাদু হাঁটতে পারেন না। আমরা কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারিনাই। আমার ফোন, বই-খাতা, এমনকি বিয়ের জন্য জমানো গহনাও পুড়ে গেছে। এখন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেব কীভাবে বুঝতে পারছি না।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আরেক সদস্য নিলি সাহা বলেন, ‘সন্ধ্যার পর পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ রান্নাঘর ও বারান্দার দিক থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে আমার শাশুড়ি চিৎকার করেন। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে যায়। কোনোকিছুই বের করতে পারিনি, পরনের এক টুকরো কাপড়ও নেই। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আমরা কোনোমতে জীবন নিয়ে বের হতে পেরেছি। আমার শাশুড়িও আহত হয়েছেন। এখন আমরা একেবারে পথে বসে গেছি কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
দুর্গাপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মো. মঞ্জুর ফরাজী জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করি। টিনশেড বাড়ি হওয়ায় পানি আগুনের মূলে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
সকলের সহযোগিতা ও আল্লাহর রহমতে পাশের বাড়িগুলো বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত।





