যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল মজুত, অথচ বিপুল ব্যয়ে নির্মিত সরকারি গুদাম অব্যবহৃত

গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম; সরকারি কেমিক্যাল গুদাম
গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম; সরকারি কেমিক্যাল গুদাম | ছবি: এখন টিভি
0

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম। বসতঘর ও আশপাশের এলাকায় দাহ্য রাসায়নিক মজুত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ খালি পড়ে আছে সরকারের শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক রাসায়নিক গুদাম। প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থাও একে অপরের ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরনো ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন; ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুরিহাট্টায় আগুন কেড়ে নেয় আরও ৭১ প্রাণ।

এরপর ২০২২ সালের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ১৩ দমকল কর্মীসহ ৫১ জনের। সবশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামের আগুন নেভাতে গিয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিন ফায়ার ফাইটারসহ চারজন। ভয়াবহ এসব দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে কেমিক্যাল।

রাসায়নিক গুদাম সম্পৃক্ত দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকার শ্যামপুর ও গাজীপুরের টঙ্গীতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) মাধ্যমে আধুনিক কেমিক্যাল ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিস্ফোরণ প্রতিরোধী উপকরণ, ফায়ার সেন্সর, স্বয়ংক্রিয় ফোম সাপ্রেশন, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং ও প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশনের মতো আধুনিক সুবিধা রয়েছে সেখানে।

সাতটি পৃথক গুদাম, পানি সংরক্ষণাগার, ক্যান্টিন ও অফিস কক্ষ— সব মিলিয়ে সবচেয়ে উন্নত উপকরণ দিয়ে রাসায়নিক গুদামগুলো নির্মাণ করা হয়।

অথচ শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ গুদাম ফেলে গাজীপুরের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ আর ঘিঞ্জি এলাকায় গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদামগুলো।

অন্যদিকে, টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ এলাকাতেও গড়ে উঠেছে অবৈধ, ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরে মজুদ আছে দাহ্য রাসায়নিক দ্রব্য। গুদামের ভেতর চলছে ধূমপান, পাশেই খাবার হোটেল আর গ্যাস সিলিন্ডারের ডিপো। যেকোনো মুহূর্তে এলাকাটি পরিণত হতে পারে মৃত্যুকূপে।

ভয়াবহতার এখানেই শেষ নয়, এর মাত্র ২০০ গজ দূরেই টঙ্গীর সমবায় কমপ্লেক্স ভবনজুড়ে চলছে কেমিক্যাল ব্যবসা। সেখানে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতেই ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকরা।

এ মার্কেটেই মজুত করা হয় সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ ভয়ঙ্কর দাহ্য রাসায়নিক। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেন ব্যবসায়ী ও মার্কেট কমিটির নেতারা।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, কিছু প্রতিষ্ঠান শর্ত সাপেক্ষে ফায়ার লাইসেন্স পেলেও, কেমিক্যাল ব্যবসা চালানোর জন্য শুধু এই লাইসেন্স যথেষ্ট নয়।

গাজীপুরজুড়ে ঠিক কতগুলো কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কারো কাছেই। আইনি সীমাবদ্ধতায় পুলিশও নিতে পারছে না কঠোর ব্যবস্থা। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় পুলিশ।

এসএইচ