বিজ্ঞপ্তিতে জুম্ম ছাত্র জনতা জানায়, আপনারা অবগত আছেন যে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলপড়ুয়া জুম্ম কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করি।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং সেটলার বাঙালি সন্ত্রাসীরা সমন্বিতভাবে জুম্ম অবরোধকারীদের ওপর হামলা চালায়। সেই সঙ্গে তারা জুম্ম জনগণের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
এতে বহু বাড়িঘর ও দোকানপাট ভস্মীভূত হয় এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ জন জুম্ম নিহত ও ১৬ জন জুম্ম আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
তারা আরও জানায়, সেই গুইমারা-গণহত্যার প্রতিবাদে আমরা আমাদের যৌক্তিক অবরোধ কর্মসূচি চলমান রেখে প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করি। এক পর্যায়ে খাগড়াছড়ির সিভিল প্রশাসন জুম্ম ছাত্র-জনতা প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সভায় বসতে বাধ্য হয়।
আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে, জুম্ম ছাত্র জনতা কোনো রাজনৈতিক দল নয় এবং বিদ্যমান আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
জুম্ম ছাত্র জনতার সমন্বয়ক ও বিএমএসসির ছাত্রনেতা উক্যনু মারমা এবং আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে ‘ইউপিডিএফ’ বা অন্য কোনো ট্যাগ দিয়ে দমন করা যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা রাষ্ট্রের আইন, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেবল আমাদের জুম্ম বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জুম্ম নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গুইমারায় সংঘটিত অমানবিক ও নৃশংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আহুত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় আমাদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে।
প্রতিনিধি দল প্রশাসনের নিকট ৮ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করে, যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রশাসন জানিয়েছে, চলমান অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।
এছাড়া, গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার, ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও আমরা অবহিত হয়েছি।
জুম্ম ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগের প্রতি আস্থা রেখে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে আমরা ঘোষণা করছি যে, আজ রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অথবা পরবর্তী কোনো ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ স্থগিত করা হলো।
আমরা জোরদারভাবে ঘোষণা করছি - প্রশাসনের কাছে উপস্থাপিত আমাদের ৮ দফা যদি সময়মতো ও যথাযথভাবে পূরণ করা না হয়, তবে আমরা শান্তিপূর্ণ কিন্তু পুনরায় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।





