বারসিকের সহযোগিতায় পরিবেশবাদী সংগঠন শিক্ষা সংস্কৃতি পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি এবং সবুজ সংহতি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। ৭৫টি নদীর নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিশুরাও দাঁড়িয়ে নদী রক্ষার দাবি জানায়। কর্মসূচিতে শিশু থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কবি, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পরিবেশপ্রেমীরা অংশ নিয়েছেন।
নদী জেলার সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু নদীকে দখল দূষণ করে সবাই মেরে ফেলেছে। খনন করে নদী উদ্ধার ও দূষণমুক্ত করার দাবি সকলের।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সংস্কৃতিকর্মী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী , অভিভাবক, কবি, সাহিত্যিকরা বলেন, আগামী প্রজন্ম নদীগুলোর নাম জেনেছে। তারা যদি নিজ নিজ পরিবারেও নদী নিয়ে আলোচনা করে তাহলেও দূষণ থেকে ভবিষ্যতে মগড়াসহ অন্য নদীগুলো রক্ষা পাবে।
পালাকার জুয়েল রানা বলেন, ‘নেত্রকোণা নদীমাতৃক জেলা। নদীকে কেন্দ্র করেই এ এলাকায় শিল্প সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। অনেক কবি লেখক বাউল সাধক এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। নদী নিয়েই নানা গল্প কাহিনী অবলম্বনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাটক সিনেমা পালা গান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুতরাং নদীকে বাঁচাতে হবে।’
শিক্ষা সংস্কৃতি পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল কবীর সরকার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদী বাঁচাতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিনিয়ত ভরাট দখল করেই যাচ্ছে। এই নদীগুলো উদ্ধার না হলে সমাজে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। অহিংস সমাজ হবে। কারণ নদী হচ্ছে এমন একটি সত্ত্বা যা মানুষকে সহনশীল করে তোলে। প্রতিটি সাধক মানুষ নদী পাড়ের। তাই নদী রক্ষা জরুরি।’
কবি লেখক ও গবেষক অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা বলেন, ‘এই যে ছোট ছোট শিশুরা এতো গুলো নদীর নাম নিয়ে দাঁড়িয়েছে এটিই একটি আন্দোলন। তারা নিজ এলাকার নদীকে চিনতে পারছে জানতে পারছে। তদের সাঁতার কাটার আকুতি বাড়ছে। এভাবেই হয়তো নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তাটা সবার ভেতর একটা তাগিদ সৃষ্টি করবে। আমরা যা পারিনি তা যেন আগামী প্রজন্ম পারে আমাদের সেই কাজটা করে যেতে হবে। নেত্রকোনা শত নদীর জেলা। এই জেলায় নদীর ছায়ায় নানা রকমের গান কবিতা বলার মানুষ গড়ে উঠেছে। তাই ইতিহাস জানাতে হবে আগামী প্রজন্মকে।’
শিক্ষা সংস্কৃতি পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলপনা বেগম বলেন, ‘এ মগড়া নদীকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনা শহর গড়ে উঠেছিল। জেলার বিভিন্ন বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠেছে নানা নদী নিয়ে। নদীগুলো ড্রেজিং করা প্রয়োজন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে মেরে ফেলা হয়েছে সোমেশ্বরী সহ বিভিন্ন নদীকে। এ জেলায় চারটি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে যেগুলোর প্রতিটিই খনিজ সম্পদে ভরপুর। এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার করলে পরিবেশ বিপন্ন হবে না। দিনে দিনে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। তাই নদী দখলদার আর অবৈধ ভরাট কারীদের শুধুমাত্র চিহ্নিত না করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেকেই চিহ্নিত করেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।’
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক) নেত্রকোণার সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান বলেন, ‘নেত্রকোণা জেলায় ৯৫টি নদ-নদীর মধ্যে ৫৪টি বিলুপ্ত, ১৭টি প্রায় বিলুপ্ত, ১৪টি শুধু বর্ষাকালে বহমান।’
এসব নদী শুষ্ক মৌসুমে একেবারে শুকিয়ে যায়। খালের মতো দেখা যায়। কাজেই নদীগুলো উদ্ধারে সকলকে সচেতন হতে হবে। আর সচেতনতা করতেই শিশু কিশোরসহ নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা।





