উত্তাল সাগরের জলরাশি দেখেই কেটেছে শৈশব ও কৈশোর। জীবনের সুখ দুখের অনেক গল্পের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা, নদী ভাঙ্গন বা ঠিকানা পাল্টানোর গল্পটাও। দেশের জলবায়ু উদ্ধাস্তুর দ্বীপ উড়িরচরের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন। সোনালী স্মৃতিঘেরা এই বাড়িতে জীবনের বড় অংশ কাটালেও গত বছর বাধ্য হয়ে ছেড়েছেন এই আশ্রয়।
পূর্বপুরুষের ভিটা নদীগর্ভে বিসর্জন দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার এমন গল্প শাহাদাতের কাছে নতুন নয়। ঠিকানা বদলের, এমন গল্প এই জনপদের আরো অনেকের।
এমনকি দ্বীপের আমেনা বেগমও বর্ষার শঙ্কায় ছেড়ে যাচ্ছেন প্রবাসী স্বামীর ভিটা। যেখানে কাটিয়েছেন পুরো একযুগ। কিন্তু নদীর ধ্বংসাত্মক ভাঙনে বাড়ির চাল, বা অন্যান্য সব কাঠামো খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দ্বীপের অন্য প্রান্তে।
তিনি জানান, এখানে সাত বছর ধরে আছেন। নদী ভাঙনের কারণে এখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে। বর্ষা এসে গেছে। পুরো বর্ষায় ঘর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
প্রমত্ত মেঘনা আর উত্তাল বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ১৯৭০ সালে সন্দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণে জেগে উঠেছিল উড়িরচর। ৮০'র দশক থেকে সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের বিভিন্ন চরের ভূমি হারানোরা এখানে আসেন নিরাপদ ঠিকানার খোঁজে। অথচ তাদের নিত্যসঙ্গী হয় ছোট বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো জলবায়ু পরিবর্তনগত অভিঘাত।
এক অধিবাসী জানান, চর এলাকা, তাই এখানে ঝড়-তুফান বেশি হয়। এ কারণে আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।
দ্বীপে ঋতু পরিবর্তনে মাঠ ভরে উঠে ফসলে, কোথাও দোল খায় ধানের শীষ। এই ফসলের উপর সন্দ্বীপ ও আশপাশের উপজেলার মানুষ নির্ভর করলেও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত ফসল। কারণ সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে ঢল নামে লবণাক্ত পানির কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুর্বল দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এই ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম উদাহরণ হয়েও পড়ে আছে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার অবহেলার খাতায়। মেলে না জলবায়ু তহবিলের অর্থ বা প্রকল্প। তবে নদী ভাঙ্গন বা জলবায়ুর অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে একটি ক্রস ড্যাম এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া।
চট্টগ্রামের জলবায়ু সাংবাদিক ও গবেষক সালেহ নোমান বলেন, ‘দুর্গমতার কারণে আউট অব ফোকাস থেকে গেছে। আউট অব ফোকাসের কারণে আমাদের সরকারের দৃষ্টি পড়ছে না, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি পড়ছে না এমনকি বেসরকারি বিভিন্ন এনজিওর দৃষ্টিও পড়ছে না।’
সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘এটা যদি হয় যুগান্তকারী একটা পদক্ষেপ হবে। প্রথমত নোয়াখালীর সাথে উড়িরচর যুক্ত হবে এবং পরবর্তীতে দেখা যাবে সন্দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত করা যাচ্ছে।’
ক্রসড্যাম নির্মাণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি দল মাস দু'য়েক আগে পরিদর্শন করেছে উড়িরচর। তারা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে নোয়াখালী থেকে উড়িরচর ও পরবর্তী ধাপে উড়িরচর থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার।