নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার হানায় বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যুপুরী আর ধ্বংসস্তূপের নগরীতে রূপ নেয়া এ জনপদের দৃশ্যটি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগ্রাসী হানায় নিখোঁজ স্ত্রীকে খুঁজে পেতে এভাবেই পাগলের মতো ছোটা-ছুটি করছেন ৫৭ বছর বয়সী বাসিন্দা আব্দুল গনি।
ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, ‘আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। একমাত্র সন্তান ৭ বছর আগে হারিয়েছি। ভূমিধসের পর থেকে স্ত্রীকেও খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আমার স্ত্রীর মৃতদেহ কিংবা টুকরো দেহাবশেষ হলেও খুঁজে পেতে চাই।’
প্রিয়জনদের মৃত্যু ও নিখোঁজ প্রিয়জনদের সন্ধানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা জুড়েই বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে একই হাল শ্রীলঙ্কারও। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনামও ধুঁকছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। শুধু ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। জীবনযুদ্ধে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে একেবারে খালি হাতেই শুরু করার চেষ্টা করছেন অনেকে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বলেন, ‘বন্যায় সবকিছু ভেসে গেছে। আমার মতো অনেকেই এখন নিঃস্ব। শূন্য থেকে আবার জীবন শুরু করতে হবে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:
একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুনে ঝড়ের গতি বেশি না থাকলেও অনেক বেশি বৃষ্টিতে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এরইজন্য বায়ুমণ্ডল ও সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা ছাড়াও, ভবিষ্যতের ঝুঁকি শঙ্কায় সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস বলেন, ‘উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে বেশি আর্দ্রতার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে তীব্র বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটাই পদার্থবিদ্যার নিয়ম। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও তীব্র বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি রয়েছে।’
আবহাওয়ার এমন আগ্রাসী আচরণের জন্য জলবায়ু ক্ষতিকর প্রভাব যে দায়ী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর পাশাপাশি, দুর্যোগ প্রতিরোধী ও সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেয়া জরুরি হয়ে ওঠে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্রান্স জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা পরিচালক ডেভিড ফারান্ডা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যই ঝড়কে তীব্র করে তোলার পাশাপাশি ভয়াবহ পরিণতির জন্য দায়ী। যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এটি সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করছে। তাই ঝড়ের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ধারণে গবেষণা বাড়ানো দরকার। দ্বিতীয়ত, মাটিতে এমন অবকাঠামো তৈরি করা যা আরও বৃষ্টিপাত ও ভূমিধস প্রতিরোধী ও সহনশীল হয়।’
ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ- থার্টি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নাজেহাল অবস্থা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ঋণ নয়, অনুদানের অর্থ সহায়তা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত পরিবেশবাদীদের।




