বিমান ও ট্রাভেল এজেন্সি অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদনে ক্ষুব্ধ এজেন্সিগুলো

অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এজেন্সিগুলো | ছবি: এখন টিভি
0

সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও ট্রাভেল এজেন্সি নীতিমালা সংশোধন অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোনোরকম আলোচনা ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষুব্ধ ও সংশোধিত ধারার বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিরোধিতা করছে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। সদ্য বিলুপ্ত হওয়া সংগঠন আটাব বলছে, নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশ কার্যকর হলে বিপাকে পড়বে যাত্রীরা।

উৎসব কিংবা লম্বা ছুটি বা পর্যটন মৌসুমে বিমানের টিকিটের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। অভিযোগ আছে, এ সুযোগে টিকিট মজুত করে পরবর্তীতে দুই-তিন গুণ বাড়িয়ে সেই টিকিট বিক্রি করার। আবার এয়ার টিকিট গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি।

আকাশপথে যাত্রী হয়রানি বন্ধে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও ট্রাভেল এজেন্সি নীতিমালা সংশোধন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয় অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষেত্রে কোন তফসিলি ব্যাংকে দশ লাখ টাকা এবং অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষেত্রে এক কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে জামানত রাখতে হইবে।

এছাড়াও ২০১৩এর ৬১নং আইনেরধারা ৯এর সংশোধনিতে বলা হয়েছে, টিকিটিং এর উদ্দেশে দেশি ও বিদেশি এপ্লিকেশন, সিস্টেম ও পোর্টাল অবৈধভাবে ব্যবহার করলে, অন্য ট্রাভেল এজেন্সির কাছে টিকেট ক্রয়-বিক্রয় করলে এবং মজুতদারি, কালোবাজারিসহ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড করা হবে।

কিন্তু সরকারের এ অধ্যাদেশে হয়রানি না বন্ধ হয়ে উল্টো এখাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। সদ্য বিলুপ্ত ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের সাবেক উপসচিব মনে করছে, নতুন অধ্যাদেশ দেশে থাকা পাঁচ হাজার নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট কেনাবেচা নিষিদ্ধ করলে বাজারে টিকেটের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিবে। টিকিটের দাম দুই-তিনগুণ বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন:

আটাবের সাবেক উপ-সচিব মো. তোহা চৌধুরী বলেন, ‘যে এজেন্সিগুলো স্টক নিয়ে টিকিট ব্যবসা করে, তাদের কাছে মানুষকে সরাসরি যেতে হবে। পাঁচ-ছয়শো ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল আপনি বন্ধ করে দিয়ে, আপনি তিনশো-চারশো ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে চলে যাচ্ছেন, এগুলো কি ম্যাস পিপলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? সেক্ষেত্রে টিকিটের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কেবল বাড়বেই না, বরং দ্বিগুণ-তিনগুণ হবে।’

প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে বাড়তি মূল্যে টিকিট ক্রয় করে থাকে তা বন্ধ করার উদ্দেশে এ সংশোধিত অধ্যাদেশ পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে মনে করেন এজেন্সি মালিকরা। এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী আসন ঘাটতি পূরণ না করে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করাও চ্যালেঞ্জ।

বিএসসি ট্যুরিস্ট অ্যান্ড ট্রাভেলসের এক কর্মকর্তা মো. সোলাইমান বলেন, ‘বি টু বি—এ ধারাটা যদি বাদ পড়ে যায়, আমি মনে করি না এটার সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিকদের কোনো স্বার্থ্য সম্পর্কিত বিষয় আছে। ৬ লাখ আসন ঘাটতি আছে। এ ঘাটতিটা যদি আমরা মিটাইতে পারি, মজুতদারিও হবে না, আবার টিকিটের যে উচ্চমূল্য এটাও হবে না।’

এ সংশোধন কার্যকর হলে পুরোনো সিন্ডিকেট ভাঙার বদলে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার শঙ্কা জানিয়েছে কেউ কেউ।

মিরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদারুল হক বলেন, ‘পাঁচশো এজেন্সির আয়াটাওয়ালা, এ পাঁচশো থেকে আবার হয়তো পঞ্চাশ জন, এদের হয়তো সব এয়ারলাইন্সের ক্যাপিং আছে, বাকিগুলোর এয়ারলাইন্সের ক্যাপিংগুলো হয়তো নেই। তো এরই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, এ সিন্ডিকেটটা কমবে না, বরং বাড়বে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, সিন্ডিকেটগলো ভাঙছে, তবে পরবর্তীতে এরা সিন্ডিকেট তৈরি করে টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।’

১৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।

এসএইচ