ভোর থেকেই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। গন্তব্য, বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশিতে ঘেরা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।
সীমিত সংখ্যক পর্যটক, নতুন নিয়মে নিবন্ধন আর কঠোর নজরদারির মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাহাজে চেকইন কার্যক্রম। পরে, সকাল ৭টা ২০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও এমবি বার আউলিয়া। আর সকাল ৮টায় ছাড়ে কেয়ারি সিন্দাবাদ। তিনটি জাহাজে মোট যাত্রী ১১৭৪ জন ।
পর্যটকরা জানান, অনেকদিন পর সেন্টমার্টিন খোলার কারণে সবাই বেড়াতে এসেছে। সরকার এখন ভ্রমণ আরও সহজ করে দিয়েছেন।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। কিউআর কোড ও ট্রাভেল পাস যাচাইয়ের পরই তোলা হচ্ছে যাত্রী, জানালেন জাহাজ কর্তৃপক্ষ। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে জেটিঘাটে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
আরও পড়ুন:
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৭টি জাহাজ দুই মাস ব্যবসা করে কোনোভাবেই সম্ভব না। পাশাপাশি দ্বিবার্ষিক অর্থনৈতিকভাবে তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের খুবই নাজুক অবস্থা চলছে। দুই হাজার পর্যটক কলার পড়লেও যদি অন্তত পাঁচটি মাস যাওয়ার সুযোগ করে দিতো সেক্ষেত্রে কিছুটা আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। তাদের জীবন জীবীকার ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার হতো আর কি।
কক্সবাজারের টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিটা দিনই আমাদের পুলিশ আছে এবং থাকবে। আর জাহাজেও একটা আমরা বিশাল টিম দিয়ে দিয়েছি। আমাদের এখানে একটা জোন আছে। আমাদের একটা অপারেশনের টিম থাকবে সেন্টমার্টিনে। সেখানে প্রতিটা পর্যটককে আমরা নিরাপত্তার মাঝে নিয়ে আসবো। নিরাপত্তার চাদরে আমরা আমাদের পর্যটকদের ঢেকে রাখতে চাই।’
এদিকে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা মানতে তদারকি জোরদার করেছে প্রশাসন। সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ—সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রবাল, পাখি ও সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহনেও রয়েছে কড়াকড়ি। এদিকে ট্রাভেল পাস ছাড়া অবৈধভাবে সেন্টমার্টিনের টিকিট বিক্রির অভিযোগে কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজ কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য না নেয় সেজন্য চেকিং করা হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর পক্ষ থেকে। আজকের জন্য শুধুমাত্র যাত্রীদের জন্য সৌজন্যমূলক পানির বোতলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
নতুন নিয়ম, কড়াকড়ি তদারকি আর সীমিত যাত্রী—সব মিলিয়ে আবারও গতি ফিরছে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুটে। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা আর নিরাপদ ভ্রমণের সমন্বয়েই এগোচ্ছে এবারের পর্যটন মৌসুম।





