বরগুনায় ৬ কোটি টাকার জলাধারে নেই পানি; প্রকল্পকে অযৌক্তিক বলছেন পৌরবাসী

বরগুনায় পানি শোধনাগার ও ট্যাংক
বরগুনায় পানি শোধনাগার ও ট্যাংক | ছবি: এখন টিভি
0

উদ্বোধনের চার বছর পরও বরগুনায় প্রায় ৬ কোটি টাকায় নির্মিত দুটি উচ্চ জলাধারে ওঠেনি পানি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত হয় ১০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার এ ওভারহেড ট্যাংক। এদিকে পানি শোধনাগারের পুকুর দুটি এরই মধ্যে মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পৌরবাসী বলছেন, পরিত্যক্ত পানি শোধনাগারকে উৎস ধরে এই জলাধার নির্মাণ ছিলো অযৌক্তিক, যা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়।

বরগুনা শহরের বাগানবাড়ি ও থানাপাড়া রোডে দাঁড়িয়ে দুটি উচ্চ জলাধার। দেখতে সচল মনে হলেও বাস্তবে ট্যাংক দুটিতে নেই কোনো পানি। উদ্বোধনের চার বছর হলেও পড়ে আছে প্রায় ছয় কোটি টাকায় নির্মিত ট্যাংক দুটি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত হয় ১০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার এ ওভারহেড ট্যাংক। প্রকল্প চালুর কথা বলে গ্রাহক প্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে পৌর এলাকায় স্থাপন করা হয় প্রায় চার হাজার নতুন পানির মিটার। কিন্তু চার বছরেও কাজে আসেনি এসব মিটার।

স্থানীয়রা জানান, তাদের থেকে থেকে ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে তবে কোনো কার্যকারিতা পাচ্ছেন না তারা। তাদের অনেকেরই মিটার নষ্ট হয়ে গেছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওভারহেড ট্যাংকে পানি ওঠার কথা ছিল ১৯৯৮ সালে নির্মিত পুরনো পানি শোধনাগার থেকে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ শোধনাগার গ্রাহক সংকটের কারণে ২০১২ সালেই বন্ধ করে দেয়া হয়। একযুগ ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় হারিয়ে গেছে এর অনেক যন্ত্রাংশও। এদিকে, এ শোধনাগারের দুটি পুকুর মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষরা জানান, তাদের এত বড় প্রকল্প তবে প্রকল্পের কোনো কার্যকারিতা নেই। কেউ ফিল্টার খুলে নিয়ে গেছে। কোনো রক্ষণাবেক্ষণের খবর নেই সেখানে।

শোধনাগারের দুটি পুকুরের পুরো এলাকা টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে লিজদাতা। বর্তমানে ভেতরের চিত্র-তৈরি করা হয়েছে দোতলা টিনের ঘর। কর্মচারীরা জানান, পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে দুটি পুকুর।

আরও পড়ুন:

স্থানীয়রা জানায়, সেখানে পানি জমে থাকে। পানিতে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ছে। আশেপাশের এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে।

খাকদোন নদী থেকে পানি এনে প্রথম ধাপের শোধনের জন্য থাকা পুকুর দুটি কীভাবে লিজ দেয়া হলো- এমন প্রশ্নে আগের মেয়রের ওপর দায় চাপালেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা। আর নতুন নির্মিত ট্যাংক চালুর প্রশ্ন এড়িয়ে দ্রুত মিটার কার্যকরের কথা জানালেন পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী।

বরগুনা পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগের মেয়র ছিলো যখন তখন আমি শুনেছি কাউকে লিজ দেয়া হয়েছে তবে আমাদের কাছে এমন কোনো কাগজ নেই। আমাদের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দীর্ঘদিন যাবত চলে না এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়েছে। আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারের কাছে জানিয়েছি।’

বরগুনা পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘সঞ্চালন লাইন আছে এটি এখনো শেষ করা হয়নি। যার কারণে ওভার ট্যাঙ্ক আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে আমাদের প্রকল্প দেয়া হয়েছে সেটি অনুমোদন হলে আমরা আমাদের কাজ পরিচালনা করতে পারব।’

বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির পুরনো লাইন দিয়ে চলছে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ। প্রতিদিন দু’বেলা করে পানি দেয়ার কথা থাকলেও সব এলাকায় ঠিকমতো পানি পায় না পৌরবাসী।

এফএস