থ্যাঙ্কসগিভিং ডে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রবাসী যখন উৎসবের আয়োজনে মেতেছে ঠিক তখনই ওয়াশিংটন ডিসিতে মর্মান্তিক বন্দুক হামলা। স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে হামলাকারী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয় সন্দেহভাজন হামলাকারীকে।
গুলিবিদ্ধ ন্যাশনাল গার্ডের নারী সদস্য ২০ বছর বয়সী সারা বেকস্ট্রম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল গার্ড স্পেশালিস্ট ছিলেন। তার সহযোগী গুলিবিদ্ধ ২৪ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু উলফ এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পুলিশের গুলিতে আহত বন্দুকধারীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সন্দেহভাজন হামলাকারী রাহমানুল্লাহ লাকানওয়াল আফগানিস্তানের নাগরিক। ২০২১ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
নিহত সারার প্রতি শোক জানিয়েছে তার পরিবারসহ মার্কিন রাজনীতিবিদরা। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গভর্নর, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিরক্ষমন্ত্রীসহ আরও অনেক ব্যক্তি। এ সময় তাকে আমেরিকান হিরো বলে সম্বোধন করেন সবাই।
শোক জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। হামলার জন্য বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে দায়ী করেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে সন্ত্রাসী হামলায় সমগ্র জাতিকে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। গুলিবিদ্ধ ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য ডিসি টাস্ক ফোর্সের অংশ হিসেবে মোতায়েন ছিল। তারা অবিশ্বাস্য কাজ করছিল। এরকম নিরাপদ একটি জায়গায় এ ধরনের হামলা সত্যিই অকল্পনীয়। এটি খুবই জঘন্য অপরাধ।’
এর জেরে আফগানিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের সব ধরনের ফেডারেল সুবিধা ও ভর্তুকি বন্ধের হুঁশিয়ারিও দেন ট্রাম্প। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা দপ্তর এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক এরকম দেশ থেকে আসা প্রতিটি নাগরিকের তথ্য আবারও যাচাই-বাছাই শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
এমন সিদ্ধান্তে হুমকির মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা কয়েক লাখ বিদেশি নাগরিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ব্যক্তির অপরাধ দেখে ট্রাম্প প্রশাসন খুব তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তালেবানের নির্যাতনের ভয়ে ২০২১ সালে দুই লাখের মতো আফগান নাগরিক শরণার্থী ও বিশেষ ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আসে। এখনো দেড় লাখের বেশি আফগান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। তবে এখন তাদের সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান আফগানইভ্যাকের সভাপতি শন ভ্যান্ডিভার বলেন, ‘আফগান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খুব তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। হামলার জন্য বন্দুকধারী একাই দায়ী। বন্দুক সহিংসতা কোনো একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ড নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বন্দুক সহিংসতা চলছে। তবে এ সিদ্ধান্ত আফগান সম্প্রদায়ের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।’
এদিকে সন্দেহভাজন হামলাকারীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ, আইপ্যাড, মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছে এফবিআই। সন্ত্রাসবাদ কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের মামলা হিসেবে তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে এফবিআই। ঘটনাস্থলটি এখন সুরক্ষিত আছে। এরইমধ্যে বেশকিছু অস্ত্র জব্দ ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’
এদিকে ফক্স নিউজ ও নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ জানান, সন্দেহভাজন হামলাকারী রাহমানুল্লাহ লাকানওয়াল আফগানিস্তানে সিআইএ-এর হয়ে কাজ করতেন।





