ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত মাদকবিরোধী অভিযানের জেরে কারাকাস-ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। এরমধ্যেই ভেনেজুয়েলায় নতুন অভিযান চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত হচ্ছে; সম্প্রতি ৪ সূত্রের এমন চাঞ্চল্যকর দাবির পর বেড়েছে উত্তাপ। কারাকাস কাছাকাছি রণতরি মোতায়েনের পর, পুয়ের্তো রিকোর মার্কিন ঘাঁটি রুজভেল্ট রোডসে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান জড়ো করার এই দৃশ্য আগুনে ঘি ঢেলেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ট্রাম্প প্রশাসন এভাবেই সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে হোয়াইট হাউস সরাসরি কিছু না বললেও, মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে ট্রাম্পের ৫ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। ওয়াশিংটনের হুমকি মোকাবিলায় কারাকাস প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছেন মাদুরো। বাড়াচ্ছেন জনসমর্থনও। এমনকি ভেনেজুয়েলাকে পরাজিত করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্রকে, এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মাদুরো।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানটান উত্তেজনায় ভেনেজুয়েলাগামী এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ফ্লাইট চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান পরিবহন সংস্থার। যার কারণে দেশটিতে ২২ নভেম্বরের পর এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পরছে বহু যাত্রী। ওয়াশিংটন বিশৃঙ্খলার বীজ বপন করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগও তুলেছেন ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ বলেন, ‘মার্কিন পদক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় এর জন্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
ভেনেজুয়েলায় বিশৃঙ্খলা বীজ বপনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটাই আসল সন্ত্রাসবাদ। ভেনেজুয়েলার জনগণ সুখ-শান্তি ভালোবাসে। তবুও আমরা প্রস্তুত। আমাদের দেশে যদি কেউ আক্রমণ বা উৎখাতের চেষ্টা করার সাহস করে, তাহলে আমরাও প্রতিহত করার জন্য উঠে দাঁড়াব।
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনায় প্রতিবেশি দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এখনও পড়েনি নেতিবাচক প্রভাব। সামনের দিনগুলো নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, বর্তমানে স্বাভাবিক গতিতেই চলছে ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশি দেশটির পর্যটন ব্যবসা। বিমান চলাচলও স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্র ঘেঁষা হওয়ায় ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর তেমন ভুগতে হবে না মনে করলেও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমরা এখানে খুব নিরাপদ বোধ করছি। এখানকার কোনো পরিস্থিতিই উদ্বেগজনক নয়।’
আরেকজন বলেন, ‘শেষ-তিন মাদুরোর সাথে মোকাবিলা করো, কিন্তু ভেনেজুয়েলার জনগণকে কষ্ট দিও না। এটা করা ভুল হচ্ছে, নৈতিকভাবে ভুল।’
এদিকে সম্ভাব্য অভিযানের চেয়েও মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫ কোটি ডলার পুরস্কারের প্রলোভেন হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মাদক পাচার এবং অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগ আনলেও, তা অস্বীকার করে আসছেন মাদুরো।
২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলার শাসক উগো চাবেসের মৃত্যুর পর নিকোলাস মাদুরো দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও ক্ষমতা ধরে রাখার খেলায় বিজয়ী হন মাদুরো। তখন থেকেই মার্কিন প্রশাসনের চক্ষুশূল ভেনেজুয়েলার এই প্রেসিডেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ফের মাদুরো বিরোধী অবস্থান জোরালো করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।





