গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: ৩২ বছর পর্যন্ত চলতে পারে কৈশোর, বার্ধক্য শুরু ৬৬ থেকে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি | ছবি: সংগৃহীত
2

শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য আর বার্ধক্য। মানবজীবনের এই পর্যায়গুলো নিয়ে গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশ পেরোলেই কৈশোরের চঞ্চলতা শেষ বলে ধরা হলেও স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা এই বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৯ কিংবা ২০ বছরে থেমে যাবে না কৈশোর। বরং এটি ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। আর বার্ধক্যের শুরু হতে পারে ৬৬ বছর বয়স থেকেও।

মানব মস্তিস্ক নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া বড়সড় পরিবর্তন অনেকেরই জানা। তবে নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, মানব মস্তিষ্ক পাঁচটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ধাপ হলো ৯, ৩২, ৬৬ ও ৮৩ বছর বয়স। যাকে বলা হচ্ছে টার্নিং পয়েন্ট।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিশন অ্যান্ড ব্রেইন সায়েন্সেস ইউনিটের ড. অ্যালেক্সা মৌসলি বলেন, এমন নয় যে মস্তিষ্ক সারা জীবন ধরে একটি স্থিরগতিতে চলে। আসলে কিছু উত্থান-পতন ঘটে। এবং আমরা দেখতে পেয়েছি যে মস্তিষ্কে নয়, বত্রিশ, ছেষট্টি এবং তিরাশি বছর বয়সের আশেপাশে প্রধান কিছু টার্নিং পয়েন্ট আসে।

আরও পড়ুন:

গবেষকরা এই পাঁচটি পর্যায়কে চিহ্নিত করেছেন এভাবে-

জন্ম থেকে ৯ বছর পর্যন্ত শৈশব। ৯ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত কৈশোর, ৩২ থেকে ৬৬ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৬৬ থেকে ৮৩ বার্ধক্য। পরবর্তী সময়টিকে বলছেন বার্ধক্য পরবর্তী পর্যায়। কার্ড

জন্ম থেকে নয় বছর পর্যন্ত মূলত মস্তিষ্কের বিকাশ হয়। ধূসর ও শ্বেত পদার্থের দ্রুত বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি বয়ঃসন্ধির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।

পরবর্তী পর্যায়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলছেন গবেষকরা। দেখা গেছে, ৩২ বছর বয়সের আগে ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধিমত্তায় স্থিতিশীলতা আসে না। এতদিন ৩০ বছর বয়স প্রাপ্তবয়স্ক ভাবা হলেও গবেষণায় দেখা গেছে এসময় মানব মস্তিষ্কে কৈশোরের পরিবর্তনগুলো চলমান থাকে। সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সামাজিক নানা বিষয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হয় মানুষ।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিশন অ্যান্ড ব্রেইন সায়েন্সেস ইউনিটের ড. অ্যালেক্সা মৌসলি বলেন, গবেষকরা আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন কৈশোর আমাদের আগের ধারণার চেয়েও বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে। পঁচিশ বছর বয়সের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আমরা এখানে মূলত দেখাচ্ছি যে মস্তিষ্কের রিওয়াইরিং-এর পথ বা ধরন বত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত একটানা চলতে থাকে।

প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ৩২ থেকে ৬৬ বছর বয়সকে সবচেয়ে দীর্ঘ পর্যায় বলছেন গবেষকরা। এই সময়ে মস্তিষ্কে এক ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে। বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব সমান্তরালে অবস্থান করে।

৬৩ বছর বয়স থেকে মস্তিষ্কে শ্বেত পদার্থের অখণ্ডতা কমতে শুরু করে। মস্তিষ্ক এখন সামগ্রিকভাবে কাজ করার চেয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে। ৮৩ বছর পর সংযোগ বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে মানুষের কৈশোর সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন গবেষণায় কিশোর বয়সের যে বর্ধিত সময় পাওয়া গেছে তাতে মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণগত সমস্যা নিয়ে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো।

ইএ