রাজনৈতিক প্রভাব ও মালিকদের অসহযোগিতায় থমকে ঢাকার বাস রুট একীভূতকরণ প্রকল্প

রাজধানীতে বিশৃঙ্খলভাবে চলছে বাস | ছবি: এখন টিভি
0

বিভিন্ন জটিলতায় থমকে আছে রাজধানীর বাসগুলোকে একীভূতকরণ প্রকল্প। থমকে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব, বাস মালিকদের অসহযোগিতা ও সরকারের অক্ষমতাই কারণ বলছে বিশেষজ্ঞরা। বাস মালিকরা পরিকল্পিত নীতিমালা না থাকার অভিযোগ করলেও, এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব বলছে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ।

সড়কের এমন অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর সব বাস কোম্পানি একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে আধুনিক গণপরিবহণের স্বপ্ন দেখে নগরবাসী, চায় শৃঙ্খল গণপরিবহণ।

বাস যাত্রীরা জানান, সবগুলো বাস এক প্রকল্পের আওতায় আনা হোক এটা সবাই চায়। যাতে এক জায়গা থেকে টিকিট করে সিরিয়াল অনুযায়ী সব বাস চলে।

তবে বিভিন্ন জটিলতায় আধুনিক পরিবহণের স্বপ্ন থমকে আছে। যুগোপযোগী বাসের ঘাটতি যার বড় কারণ। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত অবকাঠামো, বাস মালিকদের অসহযোগিতা, বিনিয়োগে ঝুঁকি, রাজনৈতিক প্রভাব, সরকারের সক্ষমতাহীনতা এবং অসহায়ত্ব এই প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবহণ বিশেষজ্ঞ হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সরকারের অসহযোগিতা কাজ করছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টা সেখানে ঘাটতি আছে। আমরা অনেক বড় বড় প্রকল্প করে ফেলেছি। মেট্রোরেল করে ফেলেছি, এক্সপ্রেস হাইওয়ে করে ফেলেছি সেখানে গণপরিবহন পলিসি ইস্যু। আমি সুশৃঙ্খলভাবে গণপরিবহন চালাবো এটার জন্য যে ভারী অবকাঠামো লাগবে তা না৷’

বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের অংশীজনের মধ্যে ডিটিসিএ সেনাপতির দায়িত্ব পালন করলেও সৈনিকের ভূমিকায় আছে বাস মালিক ও সিটি কর্পোরেশন। আবার পুলিশসহ তাদেরই সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি এখন বড় স্টেকহোল্ডার। তথ্য বলছে, বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সব অংশীজনকে এক টেবিলে করা গেলেও, বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত বারবার ভেস্তে গেছে। বাস মালিকরা বলছেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও গ্রহণ করেনি পরিকল্পিত নীতিমালা। এতে বিনিয়োগের ওপর ভরসা পাচ্ছে না তারা।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘অনেক পরিকল্পনাই সরকারিভাবে চিন্তা হয়। এটার মিটিং, পাস করতে করতেই সময় শেষ। এটা বেসরকারি মাধ্যমে, আমাদের মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করলে খুব সহজ হবে, তাড়াতাড়ি হবে। সরকারিভাবে এটা হবে না।’

রাজনৈতিক প্রভাবকে বড় করে দেখলেও, আধুনিক প্রযুক্তির বাসের ব্যবস্থা করা গেলে, এই প্রকল্প দ্রুত আলোর মুখ দেখবে মনে করে ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘কিছু পরিবর্তন আসছে। কিছু ভালো বাস আসা শুরু করলে এটা সাকসেসফুল হবো আমরা। মডেল ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি। কিন্তু এখানেও কিছু গ্রুপিং দেখা যাচ্ছে যারা একে অন্যকে বাধা দিচ্ছে।’

এদিকে আধুনিক বাস কিংবা নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলেও প্রকল্পটির স্থায়িত্ব নির্ভর করবে বিজ্ঞানভিত্তিক অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার ওপর। কিন্তু পুরনো ব্যবস্থাকেই উপযোগী করতে চায় সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এক্সিসটিং রাস্তাগুলোকে বিদ্যমান রেখেই আমাকে পরিকল্পনা করতে হবে। যাত্রী ছাওনি যেখানে আছে, আবার কিছু কিছু যাত্রী ছাওনির ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তাভাবনা চলছে। আমাদের কাছে বিষয়গুলো আসছে আমরা কথা বলছি। জনগণের সুবিধার্থে আমরা সেগুলো করবো।’

প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়কের সঙ্গে অর্থনীতিতেও গতি আসবে। ফলে আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন জরুরি বলছে বিশেষজ্ঞরা।

ইএ