রাজধানীর ফুটপাত দখল করে নার্সারি ব্যবসা; কোন ক্ষমতাবলে?

ফুটপাত দখল করে চলছে নার্সারি ব্যবসা | ছবি: এখন টিভি
0

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠছে নার্সারি ব্যবসা। এতে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। দোকানিদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও অসাধু বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। যদিও পুরানো কায়দায় নাগরিক সমস্যা নিরসনের কথা জানায় সিটি করপোরেশন।

রাজধানীতে ভোরের আলো ফুটতেই কোটি মানুষের পথচলা। শিক্ষার্থীরা ছোটে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায়ী কিংবা চাকরিজীবীরা রওনা হন কর্মস্থলের দিকে। গন্তব্য ভিন্ন হলেও গণ বা ব্যক্তিগত বাহনের পাশাপাশি কেউ কেউ ব্যবহার করেন সড়কের দুই পাশের ফুটপাত।

তবে এ ফুটপাত যেন দিন দিন ভাসমান দোকানীদের নিজস্ব মালিকানায় পরিণত হয়েছে। এসব ভাসমান দোকান আর হকারদের ফুটপাত দখলের চিত্র তো বেশ পুরানো। দখলের এ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই নার্সারি ব্যবসায়ীরাও।

ফকিরাপুল, ধানমন্ডি, দোয়েল চত্ত্বরসহ রাজধানীর অনেক স্থানেই ফুটপাত ও সড়কে চলছে নার্সারি ব্যবসা। নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের টব ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের নিচে ফুটপাতের প্রায় অর্ধেক হারিয়ে গেছে। বাকিটাতে সারা দিন বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন, ক্রেতাদের সঙ্গে চলে দেনদরবার । ফলে, পথচারীদের কেউ ফুটপাত ধরে এলেও এখানে এসে তাঁকে নামতে হয় রাস্তায়।

পথচারীরা জানান, ফুলবাগান দিয়ে ভরে গেছে এ জায়গা। একজন হাঁটলে সমস্যা হয়ে না। তবে দুইজন এ ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারে না।

নগরীর নগরপিতা পরিবর্তন হলেও ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে চলা নার্সারির দোকানগুলো থেকে যায় আগের মতোই। যেন দেখেও দেখার কেউ নেই। প্রশ্ন উঠেছে-কাদের প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন এভাবে ফুটপাত দখল করে চলছে এই নার্সারি ব্যবসা? আর প্রশাসনই বা কী বলছে?

দীর্ঘ সময় ধরেই অবৈধভাবে চলছে এ ব্যবসা। সরকার পরিবর্তন হলেও ঠিকই সমঝোতা করে চলছে কার্যক্রম। ক্যামেরার সামনে বিগত আমলে পুলিশ, রাজনীতিবীদদের সঙ্গে লেনদেনের কথা স্বীকার করলেও বর্তমানে কাদের ছত্রছায়ায় চলছে এ ব্যবসা প্রশ্নে এড়িয়ে যান দোকানী।

আরও পড়ুন:

দোকানীদের একজন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোক ছিলো, এ এলাকার নেতারা ছিলো। তারপর সিটি করপোরেশন আসত ওদের তো আর নাম নাই।’

ক্যামেরা রেখে যাওয়াতে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। জানান বর্তমানে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চলছে বেচাকেনা। সেই সঙ্গে রাতে লাইট জালিয়ে ব্যবসায় জন্য বাড়তি টাকা নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

যদিও অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগের বিষয় জানতে বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

এদিকে ফুটপাতে অবৈধ এসব নার্সারি ব্যবসা কীভাবে দিব্যি চলছে, তা জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে এখন টিভি। সপ্তাহ খানেক পরে কর্তৃপক্ষের দেখা মিললেও পুরনো কায়দায় শোনালেন আশার বাণী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ক্ষেত্রে খুবই প্রতিবন্ধকতা যেখানে হয় সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। ফুটপাত ইজারা দেয়ার কোনো সিস্টেম নেই। তবে তারা সেভাবেই ব্যবসা করছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো সরানোর জন্য’।

দীর্ঘ সময় ফুটপাত দখল মুক্ত না করতে পারাকে প্রশাসনের গাফলতিকেই দুষলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে জানালেন কিভাবে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মাদ খান বলেন, ‘সরকার যদি সেই অর্থে কালেকটিভলি শহরের প্ল্যান অনুযায়ী নার্সারির জন্য সুরক্ষিত জায়গাও তৈরি করতে পারে তাহলে সমাধান পাওয়া যাবে। খালের পারেও আমরা নার্সারি তৈরি করার সুযোগ দিতে পারি।’

যেহেতু গাছ প্রকৃতির সৌন্দর্যের বাহন, ভূমিকা রাখছে সবুজায়নে। তাই এসব নার্সারি ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা দেয়ারও তাগিদ নগরবিদদের।

এফএস