বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি রপ্তানি। টানা তিন মাস ধরে দেশের এ খাতের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে বাড়ছে অস্বস্তি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ২৫ শতাংশ। তারপর থেকে প্রতি মাসে রপ্তানি কমেছে ধারাবাহিকভাবে। আগস্টে রপ্তানি হয়েছে ৩৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৩৬২ কোটি ৭৬ ও অক্টোবরে ৩৮২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কমেছে ৪ দশমিক ৬১ ও ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গ্রাফিক্স
দেশের রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক, যা মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসের পর থেকেই এ খাতে ধারাবাহিক পতন চলছে। গেলো অক্টোবরে পোশাক খাতে রপ্তানি ৩০২ কোটি ডলার। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিলো ৩১৭ ও ২৮৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৬০ কোটি ডলার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য দেশের আগ্রাসী রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে রপ্তানি খাতে। তাদের মতে, উত্তরণের জন্য উৎপাদন খরচ কমানো এবং প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
মানেল ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশিদুল হাসান চাঁদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে লাগামহীন বক্তব্য প্রেসে দেয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকা, পাশাপাশি আমাদের রপ্তানি সহজীকরণ করা। কারণ বিদেশি ক্রেতারা কিন্তু বুঝতে পারছে না আমরা সঠিক সময়ে সঠিক পণ্যটা ডেলিভারি করতে পারবো কি না।
আরও পড়ুন:
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়েছে রপ্তানিমুখী অনেক কারখানা। বিজিএমইএ-এর হিসাবে গত ১৪ মাসে শুধু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে ৩৫৩টির মত। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, সরকারের নীতিগত পরিবর্তন, এনবিআরে কর্মবিরতি ও বন্দরের
সক্ষমতার অভাবে বেড়েছে কারখানা বন্ধের হার। এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতায় রপ্তানি আরও কমার শঙ্কা তার।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বিভিন্ন সময় যে পলিসিগুলো হঠাৎ পাল্টানো হয় এটা অনেক ক্ষেত্রে এক্সেপ্ট করতে পারে না। কিছুদিন হলো এনবিআরের জটিলতা, কোর্টের ইনিফিশিয়েন্সি, বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। প্রতি নির্বাচনের সময়েই বায়ার ইচ্ছা করে কিছু অর্ডার কমিয়ে দেয়। কমিয়ে দেয় এ কারণে যে তারা কনসার্ন তাদের পণ্য ঠিকমতো ডেলিভারি হবে কি না।
এদিকে, ইপিবির তথ্য বলছে, গেল অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। বেড়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজার ও পণ্য বৈচিত্র্য বাড়ানো না গেলে রপ্তানি সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, সাভারে যে লেদার সিটি আছে সেটার মান আরও কিভাবে উন্নত করা যায়, সেটার যে সেন্ট্রাল এমপ্লয়িট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সেটাকে আরও কার্যকর করতে হবে। এত খাবার আমরা তৈরি করি সেটার হালনাগাদ সার্টিফিকেশন যদি করতে পারি, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবের সঙ্গে যদি একটা প্যাক্টে যেতে পারি তাহলে এ খাদ্যপণ্যগুলোই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতে পারে।
রপ্তানিতে প্রচলিত বাজার নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ও যুক্তরাজ্যর মতো প্রচলিত বাজার থেকে শুধু পোশাক খাতে রপ্তানি আয় এসেছে ৮৩১ কোটি ডলার, বাকি দেশগুলো থেকে যার পরিমাণ ১৬৬ কোটি ডলার। বাজার সম্প্রসারণে সরকারকে আরও কৌশলী হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
ড. মাহফুজ কবীর বলেন, আমরা মনে করি সবাই আমাদের জন্য এগিয়ে আসবে। আশিয়ানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য করা যায় কি না সেটা এখনই চিন্তা করা উচিত। আরসে নামে একটা রিজিওনাল ট্রেড এগ্রিমেন্ট রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা কিভাবে যুক্ত হতে পারি সেটাও দেখতে হবে। দক্ষিণ আমেরিকার বাজার বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু এবং চিলি এ চারটা দেশ কিন্তু বড় অর্থনীতি। সেখানে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব, মেক্সিকো, ব্রাজিলের মতো অপ্রচলিত বাজারে বিশেষ গুরুত্ব দিলে রপ্তানি আয়ে কিছুটা গতি বাড়বে বলে মতামত অর্থনীতিবিদদের।





