শিবচর-মাদারীপুরের ৪ সেতুর নির্মাণকাজ স্থবির; প্রকল্পের নামে এলজিইডির ‘খামখেয়ালিপনা’

অসমাপ্ত সেতুর কাজ
অসমাপ্ত সেতুর কাজ | ছবি: এখন টিভি
13

পদ্মা সেতু হয়ে শিবচর-মাদারীপুর সড়কের ৪টি সেতুর নির্মাণকাজ থমকে আছে। জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা না দিয়ে এমনকি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন না নিয়েই তড়িঘড়ি প্রকল্পের কাজ শুরু করে এলজিইডি। তৎকালীন রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিয়মবহির্ভূত এমন কাজ করায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। প্রকল্পের মাঝপথে থেমেছে সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। এলজিইডি ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার দায় জেলা প্রশাসনের ওপর চাপালেও জেলা প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা।

নদীর মাঝে কয়েকটি পিলার ঠায় দাঁড়িয়ে। নেই কোনো কর্মযজ্ঞ, শ্রমিক ও প্রকৌশলী। সেতুটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। এরই মাঝে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ! প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের শিবচর-মাদারীপুর সড়কের কুতুবপুর সেতুর নির্মাণকাজ এখন ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এভাবেই থমকে আছে।

শুধু কুতুবপুর সেতু নয়, ৪০ কিলোমিটার এই সড়কে এরকম আরও তিনটি সেতুর একই দশা। মরা আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর এরই একটি নির্মাণাধীন ছিলারচর সেতু। ৪শ' ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি এখন স্থানীয়দের কাছে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ। নতুন সেতু নির্মাণে ভেঙে ফেলা হয় পাশে থাকা পুরনো সেতু আর সংযোগ সড়ক। ফলে ভেঙে পড়েছে দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ৪টি ইউনিয়েনের সাথে ছিলারচর ও ক্রোকচর বাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বিরূপ প্রভাব পড়ে কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যে। চরম ভোগান্তিতে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন:

স্থানীয়রা জানান, সেতুর এ অবস্থার জন্য চলাচলে তাদের অসুবিধা হয়। এ রাস্তায় গাড়ি চলতে পারে না। ব্যবসার মালামাল বহনে করতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। এছাড়া, পায়ে হেঁটেও চলাচলে হচ্ছে সমস্যা।

চান্দেরচর আর হাকিমপুর সেতুর নির্মাণের প্রথম মেয়াদ শেষ। অধিগ্রহণ আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন ঝামেলায় বন্ধ সেতু দুটির কাজও। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েন স্থানীয়রা। ৪টি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় আয় কমেছে চালকদের। আর ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা টাকা বুঝে না পেয়ে ভুগছেন হতাশায়।

এসব জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের নিজেদের পাওনা টাকাও তাদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না।

সেতু নির্মাণে গাফিলতা নেই জানিয়ে জমির অধিগ্রহণ জটিলতাকেই দুষছে এলজিইডি। আর জেলা প্রশাসন বলছে, ভূমি অধিগ্রহণে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু করায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।

মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্ত্তনীয়া বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজটি ধীরগতিতে হচ্ছে, কোনো কোনো কাজ বন্ধ অবস্থায় আছে। আমরা বারবার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে চেষ্টা করেছি সমস্যা সমাধান করার।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক আফছানা বিলকিস বলেন, ‘প্রত্যাশী সংস্থা প্রস্তাব না পাঠিয়েই প্রকল্প সমাপ্ত করে ফেলেছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যাশী সংস্থার থেকে আমরা কিভাবে জমির মূল্যায়ন নির্ধারণ করবো সেটার বিষয়েও আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব।’

৪টি সেতুর মধ্যে ৩টির মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ। এতে কাজ হয়েছে গড়ে মাত্র ৫০ শতাংশ। সেতুগুলোর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১শ’ ৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

ইএ