গাজা সীমান্তে সামরিক ঘাঁটি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র; ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যৌথ কমিটির ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি
যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজা সীমান্তের কাছে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণে ঘাঁটিটিতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে কয়েক হাজার মার্কিন সেনা। এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যৌথ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিলো ফ্রান্স ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে শক্তিশালী করতে আইনি, সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে কাজ করবে এ কমিটি।

অস্ত্রবিরতি কার্যকরের এক মাস পরও গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহে অব্যাহতভাবে বাধা দিয়ে চলেছে ইসরাইল। দুর্বিষহ পরিবেশে জীবন বাঁচানোর রসদ থেকেও বঞ্চিত লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

১০ অক্টোবর কার্যকর অস্ত্রবিরতি ভঙ্গুর হলেও তুলনামূলক স্বস্তি ফিরেছিল উপত্যকায়। জাতিসংঘ বলছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত পানি, স্যানিটেশন সামগ্রী, কম্বল ও শীতের পোশাকের মতো জরুরি পণ্যের প্রবেশ ১০৭ বার আটকে দিয়েছে ইসরাইল।

গাজার স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘চলতি বছর ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমি সামান্য ত্রাণও পাইনি বললেই চলে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া ভীষণ কঠিন। আংশিক পরিশুদ্ধ লবণাক্ত পানিও দুই দিন আগে থেকে মিলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন। প্রতিটা দিনই ভীষণ কঠিনভাবে কাটছে।’

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য, যুদ্ধ কবলিত উপত্যকায় আগস্ট থেকে শিশুদের টিকার জন্য জরুরি ১০ লাখ সিরিঞ্জ, এমনকি বেবি ফর্মুলাও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইল।

ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, ‘ইউনিসেফ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে বাধা কাটানোর চেষ্টা করছে, সেটি হলো গাজায় সিরিঞ্জ ও সৌরশক্তিচালিত রেফ্রিজারেটর আনা, যা কয়েক মাস আগে কেনা হয়। আমরা ১৬ লাখ সিরিঞ্জ কিনেছি, যার বেশিরভাগই এখনও গাজায় ঢুকতে পারেনি।’

আরও পড়ুন:

গাজায় অস্ত্রবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে গত সোমবার (১০ নভেম্বর) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপই অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ায় দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না গাজায় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা আজও শরণার্থী। থাকার জন্য একটা তাঁবুও নেই আমাদের, মৌলিক প্রয়োজন মিটবে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেখছি না। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপই ঠিকভাবে কার্যকর হতে দিচ্ছে না ইসরাইল, দ্বিতীয় ধাপ বাদই দিন। দিনে ৬০০ ট্রাক ঢোকার কথা চুক্তি অনুযায়ী, ঢুকছে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক জীবন নয়। এখনও চরম দুর্দশার মধ্যে আছি। মানুষ অনাহারে থাকছে, মরছে, জীবন ধ্বংস হচ্ছে। যুদ্ধ নাকি শেষ, এটা সত্য নয়। এক মাসেও অস্ত্রবিরতির চুক্তি কার্যকর হয়নি।’

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যৌথ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে শক্তিশালী করতে আইনি, সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে কাজ করবে কমিটিটি। গতকাল (মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর) প্যারিসে এলিজি প্যালেসে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে স্বাগত জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ। জানান, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়নে ফিলিস্তিনকে সহযোগিতা করবে ফ্রান্স।

আরও পড়ুন:

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে, শান্তি পথ খুলতে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে ফ্রান্স। এ লক্ষ্যে আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সুসংহতকরণে যৌথ কমিটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কমিটি সাংবিধানিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকসহ সব আইনি দিক নিয়ে কাজ করবে। নতুন সংবিধান তৈরিতে সাহায্য করবে।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘সব বেসামরিক হত্যা ও অপহরণের বিরুদ্ধে আমরা, যার মধ্যে হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামলাও অন্তর্ভুক্ত। একইসঙ্গে আমরা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কারণ এটি আমাদের নীতি ও মূল্যবোধবিরোধী। আমরা সংলাপ ও শান্তির সংস্কৃতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, বহুত্ববাদ আর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণতান্ত্রিক, নিরস্ত্র রাষ্ট্র চাই।’

এদিকে গাজায় অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণে সীমান্তের কাছে ইসরাইলের দখলকৃত অংশে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের খবর, ঘাঁটিটিতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে কয়েক হাজার মার্কিন সেনা।

বর্তমানে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণে ইসরাইলের দক্ষিণে কিরিয়াত গাতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্র সিএমসিসিতে অবস্থান করছে ২০০ মার্কিন সেনা।

এসএস