নিয়ন্ত্রকের অভাবে ফ্লাইট চলাচল কমানোর সিদ্ধান্ত মার্কিন অ্যাভিয়েশন বিভাগের, নারাজ যাত্রীরা

একটি মার্কিন বিমান
একটি মার্কিন বিমান | ছবি: রয়টার্স
0

পর্যাপ্ত বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রকের অভাবে ফ্লাইট চলাচল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন অ্যাভিয়েশন বিভাগ। সংস্থাটির দাবি, শাটডাউনের জন্য বিমানকর্মীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ বাড়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন দাবি মানতে নারাজ যাত্রীরা। এদিকে তহবিলের অভাবে নভেম্বরে সহায়তা না পাওয়ার শঙ্কায় ফেডারেল সরকারের আওতায় খাদ্যের জন্য ভর্তুকি পাওয়া কয়েক কোটি মার্কিনী। তবে তাদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটাচ্ছে দেশটিতে বিনামূল্যে পরিচালিত ফুড ব্যাংকগুলো।

যত দিন গড়াচ্ছে তত সামনে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সরকারি শাটডাউনের প্রভাব। অক্টোবরে স্বাস্থ্য সেবা বিল নিয়ে দেশটির দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের দ্বন্দ্বের জেরে ভেস্তে যায় প্রশাসনিক ব্যয় সংক্রান্ত বাজেট বিল পাস। এরপর রিপাবলিকানরা বারবার বিলটি পাসের উদ্যোগ নিলেও আসেনি কোনো সমাধান। ব্যয় মেটাতে না পারায় ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতে সরকারি বিনোদনকেন্দ্রসহ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও, অচলাবস্থার মেয়াদ বাড়তে থাকায় এর প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলেও।

এরইমধ্যে বেতন দিতে না পারায় পর্যাপ্ত বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রকের অভাবে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পর্যায়ক্রমে দেশটির অভ্যন্তরে চলাচল করা বিমানের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, শুক্রবার (৭ নভেম্বর) থেকে বিমান সংস্থাগুলো চার শতাংশ ফ্লাইট চলাচল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এতদিন জরুরি কর্মী অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৩ হাজার বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী ও ৫০ হাজার নিরাপত্তা স্ক্রিনারকেও কোনো বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য করেছিল মার্কিন বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দেশটিতে খাবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য থ্যাংঙ্কসগিভিং ডের কথা চিন্তা করে এবং কর্মীদের অতিরিক্ত কাজের চাপ কমাতে বিমান চলাচল হ্রাসের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে বলে এক্স বার্তায় জানান মাকিন বিমান পরিবহন সচিব শন ডাফি।

তবে প্রশাসনের এসকল যুক্তি মন গলাতে পারছে না যাত্রীদের। হঠাৎ করে প্রশাসনের ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্তে বিপাকে তারা।

যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এতদিন ধরে ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা বিনা বেতনে কাজ করেছে, এটা অবাস্তব মনে হয়। ১০ শতাংশ বিমান কম চালানোর সিদ্ধান্তটি নিয়মিত বিমানে চলাচল করা যাত্রীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। আমি চাই কয়েক মাসের মধ্যে সমাধান আসুক।’

আরও পড়ুন:

বিমান চলাচল বিশ্লেষণকারী সংস্থা সিরিয়াম জানায়, এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাতিল হতে পারে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা প্রায় এক হাজার ৮০০টি ফ্লাইট। ঠিক কোন কোন ফ্লাইট এর আওতায় পড়ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফ্লাইট ফাইন্ডার ওয়েবসাইট গোয়িংয়ের ভ্রমণ বিশ্লেষক কেটি ন্যাস্ট্রো এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে জানান, ছোট শহরের কম যাত্রী বহনকারী এবং সীমিত সিডিউলের ফ্লাইটগুলো বন্ধের আওতায় পড়বে।

শুধু বিমান যাত্রীরাই নয়, চলমান শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যের জন্য মাসিক ভর্তুকি পাওয়া চার কোটি ২০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনেও। সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের বা স্ন্যাপের বাজেট ফুরিয়ে আসায় নভেম্বরে এর কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত জানায়, আংশিকভাবে হলেও জরুরি তহবিলের অর্থ খরচ করে প্রকল্পটি চালু রাখতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।

এদিকে এ বিপর্যয়ের মুখে মার্কিনীদের জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটিতে বিনামূল্যে পরিচালনাকারী বিভিন্ন সংস্থার ফুড ব্যাংক সার্ভিস। এতে খুশি খাবার গ্রহণকারীরাও।

যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যা ঘটছে তা ভয়াবহ। তবে আমি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ যে কাউন্টিতে এমন সহায়তা চালু আছে। আমি ট্রাম্প সমর্থক। দ্রুত সরকার ব্যবস্থা সচলের আহ্বান জানাচ্ছি। বিলে কোনো সমস্যা দেখি না।’

অন্য একজন বলেন, ‘সার্জারির পর ধীরে ধীরে সেরে উঠছি। স্ন্যাপের অনুমোদন পাওয়ায়, ভেবেছিলাম বছরের বাকী সময়টা ভালোভাবে কাটাতে পারবো। তবে এখন যা ঘটছে তা বিরক্তিকর। জানি না এটি কতদিন চলবে। তবে আশা রাখি পরিবর্তন আসবে।’

এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ জেরে ৩৫ দিন ধরে সরকারি শাটডাউন অব্যাহত ছিল যুক্তরাষ্ট্রে । কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের তথ্যমতে, সেসময় অর্থনৈতিক উৎপাদন কমেছিল ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এসএস