কী ঘটছে সুদানের দুই লাখ মানুষের ভাগ্যে!

মসজিদের বাইরে রাখা নিহতদের মরদেহ
মসজিদের বাইরে রাখা নিহতদের মরদেহ | ছবি: দ্যা গার্ডিয়ান
3

গল্পকে হার মানানো নারকীয়তার সাক্ষী সুদান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ওঠে আসছে, শুধু গুলি করে নয়, গাড়ির নিচে পিষ্ট করে, জীবন্ত পুড়িয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নারী-শিশুসহ অগণিত নিরস্ত্র মানুষকে। হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ। জাতিসংঘ বলছে, গণহত্যা আর গণধর্ষণের শহরে রূপ নেয়া আল-ফাশির শহরে দুই লাখ মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে, অজানা এখনও।

রাস্তায় গড়াতে থাকা রক্তের স্রোত, দেখা যাচ্ছে সুদূর মহাকাশ থেকে। এ রক্ত মানুষের।

সুদানের দারফুর অঞ্চলের আল-ফাশির শহরের পশ্চিমে পড়ে থাকা শত শত মরদেহের মাঝে নিরস্ত্র একজন। প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও মেলেনি নিস্তার। আধাসামরিক বাহিনী- র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ সেনার গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় দেহ। আল-ফাশির ইউনিভার্সিটি ভবনে থরে থরে পড়ে থাকা মরদেহ পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আরেক আরএসএফ বন্দুকধারী।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে, সুদানের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ শহর আল-ফাশিরও দখল করে নেয় আরএসএফ। জাতিসংঘ বলছে, বুধবার পর্যন্ত চারদিনে শহরটি ছেড়ে পালিয়েছে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ। সংঘাতে ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ থাকা দুই লাখের বেশি মানুষের পরিণতি এখনও অজানা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শুধু গুলি করে নয়, গাড়ির নিচে দলে দলে পিষ্ট করে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে। রেহাই পাচ্ছে না শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও।

তিন বছরে গড়িয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের গৃহযুদ্ধ। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের শিকার দেশটিতে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের লড়াইয়ের বলি দেড় লাখের বেশি মানুষ; গৃহহীন ১২ লাখ মানুষ। হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ। কোনোভাবে পালিয়ে প্রাণে বাঁচা বাকিরা জানাচ্ছেন গল্পকে হার মানানো অনাহার-নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা।

আরও পড়ুন:

পালিয়ে আসা বাসিন্দারা বলেন, ‘রাস্তায় হাঁটছিলাম। হঠাৎ বুঝতে পারলাম শহরের পতন ঘটেছে। সাথে থাকা সব মালামাল দ্রুত ছুঁড়ে ফেলেছিলাম কারণ যাদের সাথেই কিছু ছিল, তাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল। আমার চোখের সামনে আটজনকে হত্যা করা হলো।’

হঠাৎই কোত্থেকে তারা উদয় হলো জানি না। বিভিন্ন বয়সের তিন তরুণ আকাশে গুলি ছুঁড়ছিল। আরএসএফের পোশাক পরা ছিল। ভীষণ জোরে আমাদের মারলো, পোশাক ছিঁড়ে মাটিতে ফেললো। নারী হয়েও রক্ষা পাইনি আমি। আমার মেয়ের চেয়েও বয়সে ছোট ছিল সেই ছেলেটা।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফানে দুজাররিচ বলেন, ‘উত্তর কোর্দোফানের বারা শহর দখলের পর আরএসএফের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর বেরিয়ে আসছে। পাঁচজন রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবককে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের মানবাধিকার কর্মীরা ভয়াবহ যৌন সহিংসতার খবরও পেয়েছেন। মানবিক সহায়তা দেয়া সহযোগীরা আমাদের জানিয়েছেন যে আল-ফাশির বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে আরএসএফের গণ-ধর্ষণের শিকার কমপক্ষে ২৫ নারী।’

সংঘাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আল-ফাশিরের প্রকৃত পরিস্থিতি আর ভয়াবহতার মাত্রা জানা যাচ্ছে সামান্যই। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লিঙ্গ, বয়স আর জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বন্দিদের আলাদা করছে আরএসএফ। অনেককেই আটকে রাখা হয়েছে মুক্তিপণের জন্য, চাওয়া হচ্ছে সুদানিজ মুদ্রায় ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি মুদ্রা পর্যন্ত।

ইএ