১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি; শুরু হয় কয়েক দশকের যুদ্ধের, যার সমাপ্তি কোথায়- অজানা আজও।
২০২৩ সালের অক্টোবরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরাইলের দুই বছরের নজিরবিহীন বর্বরতা আর ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দেয় বিশ্বকে। তাই তো ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনকে সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া দেশের তালিকায় যুক্ত হয় যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ মার্কিনীদের বহুদিনের মিত্ররাও।
বৈশ্বিক চাপ পাশ কাটিয়ে ইসরাইলকেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে গেলেও, মার্কিন ভূখণ্ডেই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে ফিলিস্তিনপন্থিদের কণ্ঠ। রয়টার্স বা ইপসোসের সবশেষ জরিপ বলছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়া উচিত বলে মনে করেন ৫৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। ৮০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট তো এমনটা চানই; প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থকদেরও প্রায় অর্ধেকই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রশ্নে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেবেন তারা।
ছয় দিনব্যাপী জরিপটি সোমবার শেষ হলে বিশ্লেষণের পর বুধবার জরিপের ফল প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে জনমতে। গাজায় ইসরাইলের অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ অপ্রয়োজনীয় ছিল বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ।
আরও পড়ুন:
গেলো জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরা ট্রাম্প, যুদ্ধে ইসরাইলকে দিয়েছেন অকুণ্ঠ সমর্থন। তবে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় চলতি মাসে গাজার শাসকদল হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ভঙ্গুর অস্ত্র বিরতিতেও মধ্যস্থতা করেছে তার প্রশাসন।
রয়টার্সের জরিপ বলছে, দুই বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর এই অস্ত্র বিরতির জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে প্রস্তুত মার্কিন জনতা। শান্তি প্রচেষ্টা সফল হলে সাফল্যের বড় ভাগীদার হবেন ট্রাম্প, এমনটা মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া ৫১ শতাংশ মানুষ; বিরোধিতা করেছেন ৪২ শতাংশ। বিরোধী শিবিরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের সার্বিক ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন ২০ জনে মাত্র একজন ডেমোক্র্যাট সমর্থক; তবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি টেকসই হলে ট্রাম্পেরই প্রশংসা মেলা উচিত বলে মত ২৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাটের।
যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অবশ্য বলছে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে সাফল্য বহুদূরের বিষয়। সপ্তাহভর ইসরাইলি হামলায় এরই মধ্যে হুমকির মুখে অস্ত্র বিরতির ভবিষ্যৎ। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা জারি রাখতে ইসরাইল ও হামাসের ওপর চাপও বাড়াচ্ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা। কিন্তু তাও হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার মতো জটিল সব ইস্যু অমীমাংসিত বলে মার্কিন চাপ কতোটা কাজে দেবে, সে বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।
তা সত্ত্বেও গাজায় অস্ত্র বিরতি কার্যকরের পর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির, বলছে জরিপ। অস্ত্র বিরতি কার্যকরের ঠিক আগে, চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে ৩৩ শতাংশ মানুষ রায় দিলেও, মাত্র দুই সপ্তাহে সমর্থন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে; যা গেলো জুলাই মাসের পর সর্বোচ্চ। অনলাইনে রয়টার্স বা ইপসোসের এ জরিপে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ।





