দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরে এসেছে প্রশান্ত মহাসাগরের ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ ‘ব্লব’। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, জাপান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মাইল এলাকাজুড়ে বিশাল এ উষ্ণ পানির আস্তরণ ছড়িয়ে পড়েছে। এর তীব্র আঁচ বঙ্গোপসাগরেও অনুভূত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবেই এ ‘ব্লব’ এর পুনরুত্থান হয়েছে, যা স্থলভাগের আবহাওয়া এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
মূলত ‘ব্লব’ হলো এক ধরনের সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ বা মেরিন হিটওয়েভ। ২০১৩ সালে এটি প্রথমবার প্রশান্ত মহাসাগরে শনাক্ত হয়েছিল এবং অনেকদিন অদৃশ্য থাকার পর এবছর এটি আবার ফিরে এসেছে। সাধারণত, যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর বাতাসের গতি কমে যায় বা বাতাস স্থির থাকে, তখন সূর্য থেকে আসা তাপ সমুদ্রের উপরিভাগে আটকে পড়ে। এতে পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যা এ ‘ব্লব’ বা উষ্ণ পানির আস্তরণ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে এ ধরনের ঘটনা এখন আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হতে পারে।
এ সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাছ, সামুদ্রিক পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন ও খাদ্যের উৎস ব্যাহত হচ্ছে। উষ্ণ পানির কারণে সামুদ্রিক প্রাণীরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি আলাস্কার জলসীমায় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখির গণমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা এ তাপপ্রবাহের প্রত্যক্ষ ফল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
‘ব্লব’ শুধু সমুদ্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এর প্রভাব স্থলভাগের আবহাওয়ার ওপরও পড়ে। এটি এল নিনো জলবায়ু চক্রের মতো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চরম আবহাওয়ার জন্ম দিচ্ছে। এর প্রভাবে তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা এবং দাবানলের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামীতে আরও ঘন ঘন এবং তীব্র ‘ব্লব’ দেখা যাবে। এটি পৃথিবীর জলবায়ুর জন্য একটি বড় হুমকি। সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শুধু সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে না, বরং এটি সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমাতেও ভূমিকা রাখছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো অপরিহার্য। পাশাপাশি, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং গবেষণা জোরদার করা জরুরি। অন্যথায় এ সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে ভবিষ্যতে মানবজাতিকে আরও বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।





