জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে ফিরে গাজা যুদ্ধ বন্ধে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এ ইস্যুতে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এবার আলোচনা করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও।
দু'পক্ষের সঙ্গে আলাপের পর হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরাইলকে কোনভাবেই অধ্যুষিত পশ্চিম তীরের দখল নিতে দেবেন না তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাই। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চাই।’
তবে ট্রাম্প তার এ প্রতিশ্রুতিতে কতদিন অনড় থাকবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ইসরাইলের হাত থেকে পশ্চিম তীর রক্ষায় বিস্তারিত কোন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেনি, সেক্ষেত্র ট্রাম্প আদৌ তার কথা রাখবেন কী না সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার মধ্যেই গাজা সিটিতে হামলা অব্যাহত রেখে ইসরাইল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এবার সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো টার্গেটে পরিণত করেছে আইডিএফ। মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বহুতল হাসপাতাল। এতে করে ভেঙ্গে পড়ছে পুরো শহরের স্বাস্থ্যসেবা।
গাজার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘গতকাল থেকে হাসপাতালগুলোকে সরাসরি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। শুরুতে আল-শাতি ক্যাম্প এবং পরে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে হামলা করে। গাজা শহরের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছে। হাসপাতালে হামলা করে এখানকার মানুষকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করছে ইসরাইল। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এরইমধ্যে গাজার অনেক ফিলিস্তিনি দক্ষিণে চলে গেছে।’
আরও পড়ুন:
গাজায় এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জেরে ইউরোপের দেশগুলো থেকে বেশ চাপে পড়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। আরও একবার যার প্রমাণ পাওয়া যায় নেতানিয়াহুর অস্বাভাবিক ফ্লাইট রুট দেখলে। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে তেল আবিব থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া নেতানিয়াহুকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ইউরোপের দেশগুলোর আকাশসীমা এড়িয়ে ভূমধ্যসাগর দিয়ে যায়। মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যুদ্ধাপরাধে অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থেকে বাঁচতেই এই পথ অনুসরণ করেন নেতানিয়াহু।
এদিকে সুইডিশ পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণবাহী ফ্রিডম ফ্রোটিলার নৌবহর এরইমধ্যে ফ্রান্সে পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনিদের মুখে খাবার তুলে দিতে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো গাজার উদ্দেশ্য ছুটে চলছে এই নৌবহর। যদিও এবারও তাদের কোন ত্রাণ গাজায় পৌঁছাতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি ইসরাইলের।
ইসরাইলের একের পর এক হুঁশিয়ারিতে এবারও হুমকির মুখে ফ্রিডম ফ্রোটিলা জাহাজে থাকা মানবাধিকার কর্মীরা। তবে এবারের যাত্রাতেও কোনভাবেই পিছু হটবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নৌবহরের কর্ণধার।
সুইডিশ পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ‘ইসরাইলকে ভয় পাই না। তবে বিশ্ববাসী তাদের মানবিক দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছে, এ বিষয় নিয়ে শঙ্কিত। তবে এখনও কিছু মানুষের মানবতা রয়েছে। এখন কিছু মানুষ একে অপরকে সহায়তার পাশে দাঁড়ায়।’
গ্রেটা থুনবার্গসহ পুরো নৌবহরের নিরাপত্তায় এরইমধ্যে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে স্পেন ও ইতালি। শুক্রবার ভোরে কার্টেজেনা বন্দর থেকে রওয়ানা দেয় স্পেনের জাহাজটি।





