লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ: এক বছর পরও বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

হাসপাতালে রোগীরা
হাসপাতালে রোগীরা | ছবি: সংগৃহীত
0

গেল বছরের সেপ্টেম্বরে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতরা বয়ে বেড়াচ্ছে দুর্বিষহ ক্ষতচিহ্ন। এখনও সেই দিনের ঘটনা স্মরণ করে আঁতকে উঠেন তারা। কেউ হারিয়েছেন চোখ, কেউবা হাতের আঙুল। চিরতরে পঙ্গুত্বও বরণ করেন অনেকে। নিজেদের সুস্থতা কামনার পাশাপাশি, প্রত্যাশা করেন এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে।

একসময় বৈরুতের একটি কোম্পানিতে নানান কাজে কাটতো জয়নব মোসতারাহের সময়। কিন্তু গত বছর থেকে দুই চোখের জ্যোতি ধরে রাখতে নানা ধরনের অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে জয়নবকে। কারণ চোখের ৯০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন লেবাননের তরুণী।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। পেজারটি পরিবারের কারো একজনের ছিল। এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পেজারটি বিস্ফোরণ হয়।’

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ ইসরাইলের ভয়াবহ পেজার বিস্ফোরণের সাক্ষী শুধু চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ডানহাতের কিছু আঙুলও হারাতে হয়েছে জয়নবকে। গেল বছরে ১৪ বার ছুরি-কাঁচির মধ্য দিয়ে গেছেন তিনি। বাকি আছে আরও সাতটি কসমেটিকস সার্জারি। ঠিক কী কারণে ঘটেছিল এই বিস্ফোরণ? এর জন্য দায়ী কে বা কারা? তা নিয়ে বিস্তর জিজ্ঞাসা তার।

আরও পড়ুন:

বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘আমরা অনেক শিশু ও নারীকে দেখেছি যারা পেজার কী জানে না? তারা এটি ব্যবহারও করে না। কিন্তু তারাও এই হামলার স্বীকার হয়েছে। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও কিছু নীতি থাকে, তবে এ ক্ষেত্রে শত্রুরা সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। যে বা যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাকে আর যাই হোক মানুষ বলতে পারি না।’

পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা মনে করে এখনো আঁতকে উঠেন ৩৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসের আল দীন। হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত একটি হাসপাতালের প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক ছিলেন তিনি। হামলার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরপরই বিস্ফোরিত হয় তার হাতে থাকা পেজারটি। এতে বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। হারান বাম হাতের আঙুল।

মোহাম্মদ নাসের আল দীন বলেন, ‘আমার স্পষ্ট কিছু মনে নেই। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে ততক্ষণে কোমায় চলে গেছি।’

পেজার বিস্ফোরণে আহতদের ক্ষতের ভয়াবহতা কথা জানান লেবাননের এক চিকিৎসক।

চিকিৎসকদের একজন বলেন, ‘বিস্ফোরণে আহত অনেকে জিজ্ঞাসা করেছে তাদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে? আমরা কোনো উত্তর দিতে পারি নি। বেশিরভাগই চোখে মারাত্মক ক্ষত নিয়ে এসেছিল। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অনেকের চোখ বাঁচিয়েছি। অনেকের বাঁচাতে পারিনি।’

পেজার মূলত যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত একটি তারবিহীন মাধ্যম। লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যরা মোবাইলের বিকল্প হিসেবে সাধারণত ডিভাইসটি ব্যবহার করে থাকে।

তবে গেল বছরের সেপ্টেম্বরে আকস্মিকভাবে বিস্ফোরণ ঘটে অন্তত ১০০ টি পেজারের। এতে প্রাণ হারান অন্তত ৩৯ জন। এ ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ৩ হাজার ৪০০ জন। সেসময় বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে হিজবুল্লাহ।

সেজু