গ্রেপ্তারের সময় বোলটার শক্তিশালী অস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন। তবে তিনি পুলিশের প্রতি কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি। অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানান, বোলটার ধীরগতিতে হামাগুড়ি দিয়ে একটি ধানের খেতে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ড্রোন নজরদারি ও তাপমাত্রাভিত্তিক ক্যামেরার সহায়তায় তাকে শনাক্ত করা হয়। তার সঙ্গে ছিল একটি একে-৪৭ রাইফেল, ৯ এমএম পিস্তল এবং একটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে মিনেসোটার ব্রুকলিন পার্ক এবং চ্যাম্পলিন শহরে চালানো হামলায় নিহত হন মিনেসোটার সাবেক হাউস স্পিকার ও স্টেইট রিপ্রেজেনটেটিভ প্রভাবশালী ডেমোক্রেটিক নেত্রী মেলিসা হর্টম্যান ও তার স্বামী মার্ক হর্টম্যান। একই রাতে গুলিবিদ্ধ হন বর্তমান স্টেট সিনেটর জন হফম্যান ও তার স্ত্রী। দুজনেই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সময় বোলটার পুলিশের ছদ্মবেশে ছিলেন। তার গাড়িতে ছিল নীল-লাল ফ্ল্যাশিং পুলিশ লাইট, ভুয়া ব্যাজ, ভুয়া নম্বরপ্লেট এবং নিজের মুখে পরে ছিলেন একটি রিয়েলিস্টিক সিলিকন মাস্ক।
হফম্যানদের বাড়ির সামনে গিয়ে সে চিৎকার করে বলে, ‘আমি পুলিশ, দরজা খুলুন।’ সন্দেহ হলে হফম্যান দম্পতি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং তখনই বোলটার গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর সে যায় হর্টম্যান পরিবারের বাড়িতে এবং নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তাদের দুজনকে।
তদন্তে পুলিশ বোলটারের গাড়ি থেকে একটি ‘হিট লিস্ট’ উদ্ধার করেছে, যাতে অন্তত ৭০ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের প্রত্যেকে একে একে হত্যা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এদের বেশিরভাগই ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য এবং গর্ভপাত অধিকার ও প্রগতিশীল নীতিমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পুলিশ আরও জানায়, গাড়ির ট্রাঙ্কে ছিল একাধিক অস্ত্র, পর্যবেক্ষণ নোটবই এবং ‘হিট লিস্ট’ অনুযায়ী ব্যক্তিদের ঠিকানা, সময়সীমা এবং তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার রূপরেখা।
মিনেসোটা গভর্নর টিম ওয়ালজ এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের মতপার্থক্য গুলি করে মেটাই না। এ ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ বরদাশত করা হবে না।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বোলটার সম্পর্কে জানান, তিনি ছিলেন ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল, প্রকাশ্যে গর্ভপাতবিরোধী বক্তব্য দিতেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানসিকভাবে চরম অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রমূলক চিন্তাধারায় ডুবে ছিলেন। কেউ কেউ জানান, তিনি ‘ঘর বন্দি’ জীবনযাপন করতেন এবং নিজেকে ‘ধর্মীয় যোদ্ধা’ মনে করতেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে মতাদর্শগত বিভাজনের ফল হিসেবে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিক অংশ, যা আগে মিশিগান গভর্নর অপহরণ ষড়যন্ত্র, ক্যাপিটল হামলা কিংবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর হামলার মতো ঘটনাতেও দেখা গেছে।





