আবারো ড্যাপে সংশোধন: বাস্তবায়ন হবে না কি কাগজে-কলমেই রয়ে যাবে!

অবৈধ ভবন উচ্ছেদ অভিযান
অবৈধ ভবন উচ্ছেদ অভিযান | ছবি: এখন টিভি
0

ঢাকার নগরায়ন কতটুকু পরিকল্পিত? প্রশ্নটি আসতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অগোছালো একটি শহরের ছবি, যা প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে চারপাশে। অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরকে নাগরিকবান্ধব করতে ২০১৬ সালে নেয়া হয় টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ড্যাপ। রাজউকের এই প্রকল্প ২০২২ সালে সংশোধনের পর ফের আলোচনায় এর নিয়ম-কানুন ও বিধিবিধান। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও আবারো সংশোধন হচ্ছে ড্যাপ। তবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতাকে এড়িয়ে কাগজ-কলমের সংশোধন-পরিবর্তন ও পরিমার্জন দিয়ে কতটুকু সফল হবে এই পরিকল্পনা?

বৈশ্বিক নগরায়নের সমুদ্রে ঢাকা যেন ঝুঁকিপূর্ণ ঢেউয়ের শহর। মেগাসিটি হয়েও স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা-পরিবেশসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপস্থিতি অতিনগণ্য।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই অপরিকল্পিত নকশায় বিস্তৃত হচ্ছে ঢাকা। যে-কারণে বছর জুড়েই ঘটে নগরকেন্দ্রিক দুর্ঘটনা। কখনো ছোট অগ্নিকাণ্ড রূপ নেয় মৃত্যু আয়োজনে, আবার কখনও হঠাৎ করেই হেলে পড়ে সুউচ্চ ভবন। 

এ সমস্ত ঘটনায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানির সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। ঘটনার পর কিছুদিন আলোচনা-সমালোচনা, অভিযান, তোরজোর শুরু হলেও; কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের নজির নেই।

ঢাকার নগরায়ন নিয়ে কথা উঠলেই সামনে আসে রাজউক। ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ তৈরি করে সংস্থাটি। লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করা। তবে শুরু থেকেই পরিবেশ রক্ষা, ভবনের উচ্চতা, সাশ্রয়ী আবাসন, আইনি জটিলতা ও অপর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের জটিলতায় পড়েছে ড্যাপ। ২০১৬ সালে প্রণয়ন করা এই ড্যাপ ২০২২ সালেও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল রাজউক।

গেলো বছরের সেপ্টেম্বরে রাজউক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রধান নগর স্থপতিসহ ৮ সদস্যের ড্যাপ ও বিধিমালা সংশোধন বিষয়ক কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এর দু’মাস পর ওয়েবসাইটে সাধারণ মানুষের জনমত নিয়ে সংশোধন প্রতিবেদন পাঠানো হয় গৃহায়ন ও গণপূর্তে। 

আর গেলো জানুয়ারিতে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫ এর খসড়ার যাচাইয়ে কমিটি করে মন্ত্রণালয়। সংশোধনীতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পরিবেশ রক্ষা ও ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধি।

সবশেষ সংশোধনীর খসড়া এপ্রিলে তোলা হয় উপদেষ্টা পরিষদে। সেখান থেকে আরও যাচাইয়ে ফের পাঠানো হয় রাজউকের কাছে। 

জানা গেছে, বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে আলোচনা শেষে আসছে জুনের শেষ সপ্তাহেই প্রতিবেদন পাঠাবে রাজউক। যদিও প্রথম ড্যাপের সংশোধনীতে মূল ঢাকার সাথে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কেরাণীগঞ্জ, সাভারকে যুক্ত করা হয়। তবে তা বাস্তবায়নের চেয়ে নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ।

সংশোধনের চেয়ে বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়ে নগরবিদরা বলছেন, শুধু মূল ঢাকা নিয়ে বসবাস উপযোগী নগরায়ন সম্ভব নয়।

পারদর্শী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সংশোধনের দাবি জানিয়ে রিহ্যাব বলছে, বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে চায় আবাসন খাতের এই সংগঠন।

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একার পক্ষে সম্ভব নয় মন্তব্য করে ড্যাপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বলছেন, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ডেসকোসহ নগরবাসীকে সেবা দেয়া প্রতিটি সংস্থারই সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

ড্যাপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সব সংস্থার দায়-দায়িত্ব এই ড্যাপের ভেতর নির্ধারণ করা আছে। তো এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যদি স্ব-স্ব সংস্থা নিজেদের দায়িত্বটা পালন করে, তাহলে হয়তো এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা বেশি অগ্রগতি হবে।’

এসএইচ