গাজায় আগ্রাসন বন্ধে ইসরাইলিদের বিক্ষোভ; মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্প

সাধারণ ইসরাইলিদের তেল আবিবে বিক্ষোভ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি
সাধারণ ইসরাইলিদের তেল আবিবে বিক্ষোভ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় হামাস নির্মূলের নামে গণহত্যা, ত্রাণ সহায়তা বন্ধ, ইসরাইলের বেপরোয়া সব পদক্ষেপের পেছনে দায়ী যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো, এমন মন্তব্য করে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মুসলিম বিশ্বকে এই গণহত্যা বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আগ্রাসন বন্ধে বিক্ষোভ করছেন খোদ ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

‘ডেথ টু আমেরিকা’—শনিবার (১০ মে) ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সভায় এভাবেই স্লোগান দিচ্ছিলেন তেহরানের সাধারণ মানুষ। বরাবরই গাজায় গণহত্যার বিরোধিতা করে আসছে ইরান। এরমধ্যে তেহরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগে নতুন করে উত্তেজনা চরমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে। 

এমন অবস্থায় খামেনি বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের এই গণহত্যার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ফিলিস্তিনের ইস্যুকে ভুলে গেলে চলবে না। ইসরাইল যেই গণহত্যা চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে পুরো বিশ্বকে।’

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আরো বলেন, ‘ফিলিস্তিন কিংবা গাজা, শুধু ইসরাইলের আগ্রাসন সহ্য করছে না, যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের মতো দেশের অবজ্ঞাও সহ্য করছে। অনেক দেশের বিরুদ্ধে প্রতারণার সব নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনকে যেন তারা ভুলে যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের এটা হতে দেয়া উচিত না। ইসরাইল মিথ্যাচার করছে। যেই পদক্ষেপ ইসরাইল গাজা, সিরিয়া কিংবা অন্য দেশের জন্য নিয়ে যাচ্ছে, এটা শক্তির নিদর্শন না, দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। তারা অনেক বেশি দুর্বল।’

যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গিয়ে নতুন করে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর প্রায় পুরো উপত্যকাকে নিজের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আওতায় এনেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ত্রাণ সংকট আর আইডিএফ'র হামলায় গাজায় প্রতিনিয়ত মরছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা।

এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাবেন সৌদি আরব, কাতার আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তালিকায় ইসরাইলের নাম না থাকলেও আলোচনা হবে গাজা পরিস্থিতি আর পরমাণু ইস্যু নিয়ে। 

ট্রাম্পের সফর সামনে রেখে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে বিক্ষোভ করেছেন খোদ ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। তেল আবিবে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তারা বন্দিদের মুক্তির দাবির পাশাপাশি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ট্রাম্পের কাছে ভিক্ষা চাই, নেতানিয়াহুকে চাপ দেন এই যুদ্ধ বন্ধের। সঙ্গে সব বন্দিদের ফিরিয়ে আনার। সামরিক চাপ শুধু হতাহতই বাড়াবে।’

আরেকজন বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। শুধু গাজা না, ইসরাইলের মানুষ নিয়েও তিনি ভাবেন না। এই যুদ্ধের কোন মানে হয় না। শুধু মানুষ মরছে।’

যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে স্পেনের মাদ্রিদেও। বিক্ষোভে গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আগ্রাসন পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

স্পেনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘জানি না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এতো নির্মমতা দেখেও কিভাবে ইসরাইলের মানুষ আরেক ভূখণ্ডে এমন নির্মমতা সহ্য করে। যদি তাদের দ্বিধাবিভক্ত হতে হয়, সেটাও হওয়া উচিৎ।’

আরেকজন বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা গণহত্যার শিকার হচ্ছে। সন্ত্রাসী ইসরাইল এই কাজ করছে। আমাদের সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ইসরাইল বলেছে পুরো উপত্যকা দখলে নেবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না।’

এমন অবস্থায় রাতভর ইসরাইলি হামলায় রোববার (১১ মে) গাজা উপত্যকায় আরও কয়েকজনের প্রাণ গেছে। এরমধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু। 

ইসরাইল বারবারই বলছে, হামাসের ওপর হামলা করা হচ্ছে, কিন্তু প্রাণে মরছে সাধারণ মানুষ। উপত্যকার শরণার্থী শিবিরগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। আগ্রাসনে গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছে। প্রাণ গেছে ৫২ হাজারের বেশি মানুষের।

এসএইচ