সুপেয় পানির সংকটে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা

এখন জনপদে
0

নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলায় সুপেয় পানির সংকটে অর্ধ লক্ষাধিক বাসিন্দা। শুকনো মৌসুমে পানি সংগ্রহে অনেকেরই যেতে হয় মাইল খানেক দূরে। সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই। প্রশাসন জানিয়েছে, বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পাশাপাশি স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে তারা।

নেত্রকোণায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। পাহাড় ও টিলা অধ্যুষিত দুই উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু এর মাঝে অর্ধ লক্ষাধিক বাসিন্দা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে।

কলমাকান্দার গোপালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা রোজিলা সাংমা। পানি সংগ্রহের কষ্ট তার প্রায় ৪০ বছরের। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পাহাড়ের নিচে গর্ত করে দিনে কয়েকবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বয়সের ভারে শরীর সায় না দিলেও দিনে কয়েকবার পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হয়।

রোজিলা সাংমা বলেন, ‘পানি না থাকার কারণে আমরা এ ঝর্ণার পানি খাই। ভোর ৩ টায় উঠে আমি পানি সংগ্রহ করি।’

সীমান্ত ঘেঁষা প্রায় প্রতিটি গ্রামের চিত্র একই। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে এপ্রিল থেকে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি মেলেনা। তখন তাদের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় মৃতপ্রায় ঝর্ণা ও খালবিলের পানি।

স্থানীয় মহিলাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তবুও যেহেতু খেতে হবে, তাই নিতেই হয়।’

পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে মাটির গভীরে পাথর থাকায় নলকূপ বা বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন বেশ ব্যয়বহুল। স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল বসানো হলেও শুকনো মৌসুমে আয়রনের কারণে তাও পানের অযোগ্য হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে খালবিলের পানি ব্যবহারে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ঝর্ণার পানি আমরা ব্যবহার করি, কিন্তু ওই পানি আসলে খাওয়ার অযোগ্য।’

বাংলাদেশ জাতীয় হাজংয়ের সংগঠন সভাপতি পল্টন হাজং বলেন, ‘এই ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও কাজ হয়নি। ফলে বিভিন্ন জলাশয় থেকে অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করার ফলে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।’

প্রশাসন বলছে- জেলায় সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে চেষ্টা চলছে।

নেত্রকোণা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, ‘কিছু গভীর নলকূপ বরাদ্দের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অনুদানে প্রকল্প চলমান আছে। এই প্রকল্পের আওতায় যে পানি সরবরাহ ও স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা আছে সেটাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।’

নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানি বিশ্বাস বলেন, ‘পানির স্তরটা এখানে অনেক নিচে হওয়ায়, সুপেয় পানির খুবই অভাব। সেজন্য আমরা সরকারের কাছে আরো বেশি বরাদ্দ চাইবো। আমরা যদি ১০টা পরিবারের জন্যও একটা সাবমার্সিবল টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে সেটা অনেকটাই তাদের কষ্ট লাঘব করে।’

নেত্রকোণার ১০টি উপজেলায় টিউবওয়েল স্থাপনের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার আওতায় জেলার ৮৬টি ইউনিয়নে ৭ শতাধিক টিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে। একটি টিউবওয়েল স্থাপনে খরচ হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। সে হিসেবে পুরো প্রকল্পে ব্যয় ৩২ কোটি টাকার বেশি।

এসএইচ