চট্টগ্রামে সওদাগর কলোনিতে আগুনে পুড়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

দেশে এখন
0

চট্টগ্রামের বলুয়ার দীঘিতে জাফর সওদাগর কলোনিতে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন স্বামী স্ত্রী। এই ঘটনায় একই পরিবারের আরও দু'জনসহ গুরুতর আহত হয়েছেন আরও চারজন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। যেটি ভয়াবহ হয়ে পাঁচ মিনিটে ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলোনিতে। কেড়ে নেয় নিম্নআয়ের মানুষের সহায় সম্বল।

আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো নগদ আড়াই লাখ টাকার সম্বল। তিল তিল করে সঞ্চয় করা ২০০ বা হাজার টাকার নোটগুলোর এখন কোনো মূল্যই নেই হকার মোতালেব মিয়ার কাছে। আগুনে কোনোমতে পরিবার নিয়ে নিরাপদে বের হতে পারলেও বসত ঘরের সাথে পুড়েছে স্বপ্নের ভবিষ্যৎ।

মোতালেব মিয়া বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমাদের জান নিয়ে বের হতেও কষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর কিছু বের করতে পারিনি। এখন যে এক গ্লাস পানি খাবো সে টাকাও নেই আমাদের সাথে।’

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে একটি বাসার বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বলুয়ার দীঘির জাফর কলোনিতে। অনেকেই পরিবার ও জীবন নিয়ে কোনোমতে বেরিয়ে যেতে পারলেও আগুন কেড়ে নেয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. ইলিয়াস ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারের প্রাণ। দগ্ধ হন তার পরিবারের আরও দুই সদস্যসহ চারজন।

কলোনির একজন বলেন, ‘আমার আড়াই লাখ টাকা পুড়ে গেছে। বেড়ার ঘরে থেকে কত কষ্ট করে এই টাকা জমাইছিলাম। গ্রামের বাড়িতে ঘর উঠানোর জন্য এই টাকা রাখছিলাম।’

খাট, আলমারি, হাড়ি-পাতিল তো আছেই কারও গেছে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে জমানো অর্থ। কারও সোনাদানা কাপড় সেলাইয়ের রুজি বা পানের দোকানের কামাই।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘ঘুম থেকে চোখ খুলে দেখি আগুন আমার মাথার উপর। তারপর দরজা খুলে, দরজার একপাশে পুড়ে গেছে, আর এক পাশে লাথি দিয়ে বের হয়ে আসছি।’

ফায়ার সার্ভিস জানায়, তাদের দু'টি ইউনিটের চারটি গাড়ি আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার গাড়ি এখান থেকে প্রায় ৬০০ গজ দূরে রাখতে হয়েছে। সেখান থেকে ডেলিভারি হোস এনে দীর্ঘ পরিশ্রম করে সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণ করেছে।’

চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার এস আই ইমরান হোসেন সাজ্জাদ বলেন, ‘সবমিলে নগদ প্রায় ১০ লাখ টাকা, এবং স্বর্ণের পরিমাণ দেখা যাচ্ছে প্রায় পাঁচ ভরি। আর অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখের মতো। এটাতে আরও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা আছে।’

এ ঘটনায় দগ্ধ তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এসএস