১৯৯৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রাষ্ট্র, আফ্রিকার ৩৩ ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৯টিসহ মোট ১২৪টি রাষ্ট্রের অনুমোদনের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি। যার যাত্রা শুরু ২০০২ সালে।
মূলত, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং দেশের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে জনগণের ওপর আগ্রাসন চালানোর মতো ৪টি গুরুতর অপরাধের তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম হয় আইসিসির।
অপরাধ আদালতের বিধান অনুসারে, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর, ঐ ব্যক্তি যদি আইসিসির কোনো সদস্যরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে পা রাখেন তাকে অবিলম্বে আটক ও হস্তান্তর করতে হবে।
যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যরাষ্ট্রের তালিকায় নেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইসরাইল, ইরানের মতো পরাশক্তি। ২০১৬ সালে আইসিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে রাশিয়াও।
গেল বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক আদালতের সক্ষমতা নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। আর এর পেছনে আছেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সদস্য না হয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা মিত্র দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তে যে বা যারা সহযোগিতা করবেন তাদের ভ্রমণ ভিসা ও আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের অভিযোগ, ইসরাইলের মতো ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোকে টার্গেট করে ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে আইসিসি।
এর আগে, গাজায় গণহত্যা চালানোর অপরাধে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। বিশ্লেষকরা বলছেন, গেল সপ্তাহে নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের সাথে ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের সম্পর্ক আছে।
তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিকে উপেক্ষা করে আইসিসির নির্দেশ মেনে কাজ করতে দ্বিধায় পড়তে পারে কম সক্ষমতা সম্পন্ন অনেক দেশ। পাশাপাশি, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত ও বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আদালতে এসব অপরাধের বিচার করা সম্ভব।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক গেরি সিম্পসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে যুদ্ধের মৌলিক নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইসিসি গঠন করা হয়েছিল। যদিও বহুদিন ধরে এ ধরনের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আদালতেই সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একসময় আইসিসি ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি যখন একটি আন্তর্জাতিক বিচারিক সংস্থাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন বিশ্বজুড়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, আইসিসিও রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে যেতে পারবে না। কারণ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় কতটা কার্যকর হবে তাও নির্ভর করে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক ও কূটনীতির ওপর। ফলে, এই আদালতের সক্ষমতা আদৌ কতখানি সে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।