প্রিয়জন বাড়ি ফিরবে এই আশায় আবারও প্রতীক্ষার প্রহর গুনবেন নাকি প্রস্তুতি নেবেন তার শেষকৃত্যের- এমন এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন জিম্মি ইসরাইলি নাগরিকদের পরিবারের সদস্যরা। কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যতই বলছেন, অস্ত্র বিরতি আর জিম্মিদের মুক্তির দ্বারপ্রান্তে ইসরাইল ও হামাস- এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা।
টাইমস অব ইসরাইল বলছে, এখনও ৯৮ জন ইসরাইলি নাগরিক হামাসের কাছে জিম্মি । অস্ত্র বিরতির প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তির প্রস্তাব করেছে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা। তাদের দাবি অধিকাংশ জিম্মিই জীবিত আছেন, যদিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হামাস।
গেল সোমবার হামাস-ইসরাইলের প্রতিনিধিদল ও মধ্যস্থতাকারীদের ফলপ্রসূ আলোচনার পর, মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে, হামাস ও ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিরতির ড্রাফট পাঠানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করা হয়।
কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাদেজ আল-আনসারি বলেন, ‘উভয় পক্ষের কাছে অস্ত্র বিরতির প্রথম ড্রাফট পাঠানো হয়েছে। সমঝোতায় পৌঁছানো সহজ হবে না কারণ, কিছু বিষয়ে দুই পক্ষেরই দ্বিমত আছে। তবে অগ্রগতি হচ্ছে। সমঝোতা প্রস্তাবের একদম শেষ ধাপের আলোচনা চলছে। আলোচনার বিষয়বস্তু এই মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব না। আশা করছি দুই পক্ষই আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হবে।’
মঙ্গলবার কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সংবাদ সম্মেলনের পর হোয়াইট হাউজ জানায়, তেল আবিবের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আল জাজিরা বলছে, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ওপর জোর দিচ্ছেন বাইডেন।
কারণ ২০ জানুয়ারির পর মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতে কোনো ইতিবাচক মোড় আসলে তার কৃতিত্বে ভাগ বসাবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পুনর্গঠনের দায়িত্ব ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘গেল কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের সম্মিলিত প্রয়াসে অস্ত্র বিরতির আলোচনা অন্তিম ধাপে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর চূড়ান্ত প্রস্তাবের খসড়া করেছে। বল এখন হামাসের কোর্টে। হামাস প্রস্তাব মেনে নিলে প্রস্তাবটি সংস্কার ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’
অস্ত্র বিরতি কার্যকরের পার্সেন্টেজ নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ছয়লাপ, সেই মঙ্গলবার রাতেও অবরুদ্ধ গাজায় ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী। মধ্য গাজার নুসেইরাত, দক্ষিণের রাফাহ সীমান্ত এলাকায় চালানো হয়েছে স্থল অভিযান।
যদিও, আইডিএফ সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে টাইমস অব ইসরাইল জানাচ্ছে, অবরুদ্ধ উপত্যকাটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। আবার, আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, গেল এক সপ্তাহে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলার তীব্রতা যে ভাবে বেড়েছে তাতে করে ধারণা করা হচ্ছে, অস্ত্র বিরতির সম্ভাবনা জোরালো। শেষ মুহূর্তে হামাসের ওপর সব ধরনের চাপ প্রয়োগ করেই সমঝোতায় বসবে তেল আবিব।