দেশের অর্থনীতি যে শ্রমিকের কাঁধে ভর দিয়ে চলছে সেই শ্রমিকের ৮৫ ভাগের মজুরি বা কর্মঘণ্টা নিয়ে কোনো চুক্তিপত্র নেই। এই তথ্য উঠে এসেছে সিপিডির প্রতিবেদনে। সিপিডি বলছে, ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি বৈষম্য, সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারনের সময় শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব না থাকাসহ নানা কারণে ৮০ ভাগেরই অভিযোগ মজুরি নিয়ে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'ইপিজেড লেবার রুলস রয়েছে একটা। আর বিএলএ লেবার রুলস একটা রয়েছে। আমরা মনে করি যে এই বাংলাদেশের জন্য শ্রম সংক্রান্ত বিষয়ে এককভাবে একটি রুলস তাকা দরকার। এবং সেটা বিএলএ দিয়েই নির্ধারিত হওয়া দরকার।'
সিপিডি বলছে, দেশের ৪৬ খাতের মধ্যে ৪২টি খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করা আছে। চারটি খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। যেসব খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করা আছে সেগুলোতেও যাথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হবার চিত্র স্পষ্ট। শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিককে সংখ্যা হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে।
বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতির শ্রম সংস্কার কমিশন ও সভাপতি সদস্য তাসলিমা আক্তার লিমা বলেণ, 'সংবিদান আমাদের সংগঠন করার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দর কষাকষি করার অধিকার দিলেও আমরা এমনসব আইনের জ্বালে জড়জড়িত আটকা পড়ে আচি যে সে আইনগুৃলোকে আসলে পরিবর্তন করা দরকার এবং সংস্কার করা দরকার।'
যদিও শ্রম বৈষম্যের দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ শিল্প মালিকরা।
এমসিসিআই'র প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান বলেন, 'সব ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এক রকমভাবে পে করতে পারবে না। এটা অসম্ভব। সেজন্য এই জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে।'
তবে দেশের শ্রমিকদের চরম দুর্দশার কথা স্বীকার করে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের উদ্যোগে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না থাকলে সফলতা আসবে না।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'একদিকে যেমন শাসন পদ্ধতি সংস্কারের কাজ চলছে ঠিক তেমনি পাশাপাশি জন আকাঙ্খার যে গ্যারান্টি, জনমানুষের মৌলিক অধিকারের যে গ্যারান্টি, এরও নিশ্চয়তা থাকতে হবে। নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে, এর বড় একটা কারণ হচ্ছে অটোমেশন এবং নাগরিক সুবিদার অভাব শিল্পাঞ্চলগুলোতে। আর সবকিচুই কিন্তু রাষ্ট্র, শ্রমিক, মালিক এদের সম্মিলিত একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার।'
আজ (রোববার, ১২ জানুয়ারি) ধানমন্ডিতে শ্রমিকের জীবনমান কর্মপরিবেশ ও অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ বিষয়ক আলোচনা সভায় শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে দেড় শতাধিক প্রস্তাবনা দেয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ । একইসাথে ২০২৫ সালকে শ্রম সংস্কারের বছর ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়।