বিশেষ প্রতিবেদন , পরিষেবা
অর্থনীতি
0

ফিলিং স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, শিল্পকারখানায় উৎপাদন হুমকির মুখে

রাজধানীসহ সারাদেশে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফিলিং স্টেশনে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। এরমধ্যেই শিল্পখাতে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বাড়ালেও সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এতে শিল্পখাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরির পাশাপাশি প্রভাব পড়বে বাজারে।

রাজধানীসহ সারাদেশে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফিলিং স্টেশনে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। এরমধ্যেই শিল্পখাতে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বাড়ালেও সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এতে শিল্পখাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরির পাশাপাশি প্রভাব পড়বে বাজারে।

কলেজ শিক্ষিকা রহিমা বেগম। এক যুগেরও বেশি সময় বসবাস মিরপুরের পল্লবী এলাকায়। তৈরি করছেন চার সদস্যের পরিবারের দুপুরের খাবার। লাইনের গ্যাস থাকার পরও চুলায় জ্বলছে না আগুন। যে কারণে রান্নার এ ভিন্ন ব্যবস্থা।

রহিমা বেগম বলেন, ‘আগে সকার ৭ টার দিকে আমরা রান্না করতে পারতাম। এখন দেখা যাচ্ছে ভোর পাঁচটার পরে হলে রান্না করতে পারি না। গ্যাসের চাপ এত কম।’

শুধু পরিবারটিই নয়, পল্লবীর অধিকাংশ বাসিন্দার অভিযোগ একই। এলাকাটিতে সারাবছরই লেগে থাকে তীব্র গ্যাস সংকট।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় থাকি। ইদানীং এসে গ্যাসের প্রচুর সমস্যা করছে। থাকেই না বললেই চলে।’

আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘রাত ১২ টার পরে আসে টুকটাক। যা দিয়ে রান্না করা তো দূরের কথা কিছুই করা যায় না।’

আরেকজন বলেন, ‘গ্যাস পাচ্ছি না সরকারকে ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দিচ্ছি। আবার ১৫০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে।’

এমন অবস্থার প্রায়শই সাক্ষী হতে হয় এলাকার খাবারের হোটেলগুলোকে। জানালেন- তাদের অভিজ্ঞতার কথা।

হোটেল মালিকদের একজন বলেন, ‘গ্যাস থাকে না তখন আমাদের এখানে বেশি চাপ পড়ে।’

এদিকে শীতের শুরু থেকেই তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে নগরীর ফিলিং স্টেশনে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও মিলছে না গ্যাস। টান পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের পকেটে।

সিএনজি চালকদের একজন বলেন, ‘এখন গ্যাসের সিরিয়াল দিলে মিনিমাম ৩ ঘণ্টা যাবে।’

তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে- মাতারবাড়ির মহেশখালীতে একটি ভাসমান রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বন্ধ থাকায় গ্যাস সংকট বেড়েছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত পরিমাণ করে দেয়া কোথায় কতটুকু গ্যাস দিতে হবে। এই জিনিস ভাগ থাকায় গ্যাসের চাপজনিত সমস্যার কারণে কিছু জায়গায় গ্যাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।’

এ হাহাকার শুধু বাসাবাড়িতেই নয়। শিল্পকারখানায় ঘুরছে না চাকা। ক্রেতা ধরে রাখতে ভর্তুকি দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানা চালু রাখছেন শিল্প মালিকরা। এরমধ্যেই শিল্প খাতে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হলেও গ্যাস পায়নি শিল্পখাত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ক্রমেই কমছে। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া চুক্তিও বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আমার গ্যাসের উৎসে অনুসন্ধান নেই। এখনো যদি ভোলা আর ছাতকের গ্যাস কাজে লাগানো যায় তাহলে ৫ বছরের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অর্থাৎ গ্যাসের চাহিদা পুরাণ করা সম্ভব হবে।’

বর্তমানে দেশে গ্যাসের দিনে অনুমোদিত লোড ৫৩৫ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দিনে ৩৮০ থেকে ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ২৮০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এতে ঘাটতি থাকছে দিনে ১০০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে নতুন শিল্পকারখানা। এ ছাড়া তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানায় খরচ বাড়বে। কারখানায় গ্যাস ব্যবহৃত হয় বেকারিসহ বেশি কিছু পণ্যর দাম বাড়বে। বাধাগ্রস্ত হবে নতুন বিনিয়োগ।

ইএ