দেশে এখন
0

পদ্মা সেতু হয়ে কাল থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাবে দু'টি ট্রেন

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরুর ১৪ মাস পর আগামীকাল (মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর) ভাঙ্গা জংশন থেকে নতুন পথে খুলনা ও বেনাপোল যাবে দু'টি ট্রেন। সেইসাথে চালু করে দেয়া হচ্ছে নতুন ছয়টি স্টেশনও। যদিও এসব স্টেশনের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের আশা, নতুন পথে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমার পাশাপাশি সময় বাঁচবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। সেতু হয়ে দক্ষিণে ট্রেন যাত্রার গল্পও পুরোনো। তবে এতদিন নতুন পথের সুবিধা পায়নি যাত্রীরা। ভাঙ্গা জংশনের পর আগের পথেই ছিল ভরসা।

উদ্বোধনের ১৪ মাস পর এবার খবর এলো ভাঙ্গা জংশন থেকে পুরোনো পথে নয়, নতুন পথে চলবে দুই জোড়া ট্রেন। রেলওয়ের এমন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এখন টিভির প্রতিনিধি দলের গন্তব্য ভাঙ্গা জংশনে।

গিয়ে দেখা গেলো, দেশের অত্যাধুনিক স্টেশনটির বিশালতা দৃশ্যমান হয়েছে ঠিকই তবে অসম্পূর্ণ অনেক কাজ। চলন্ত সিঁড়ি এখনও মোড়ক বন্দী, চলছে নির্মাণ শ্রমিকদের মাটি খোড়াখুড়ি।

ভাঙ্গা জংশন স্টেশনজুড়ে অন্তত শ'খানেক জায়গায় সতর্কবার্তা দেয়া আছে। অর্থাৎ এই স্টেশনের কোনো অংশই এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। কাজ শেষ হয়নি টিকিট কাউন্টার, যাত্রীদের বসার কিংবা যাতায়াতের জায়গায়। অথচ এমন নির্মাণাধীন ভবনেই কাল থেকে চালু হচ্ছে যাত্রীসেবা। থামবে দুই জোড়া ট্রেন। তাতে তৈরি হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি। কী বলছে কর্তৃপক্ষ?

বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাঙ্গা জংশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সাকিব রহমান আকন্দ বলেন, 'যাত্রীর উঠানামা করার জন্য বা মালপত্র লোডিং আনলোডিংয়ের জন্য আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। এছাড়া রেলের পুলিশ আছে। যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ রেলওয়ে এই স্টেশন বুঝে নিবে।'

শুধু ভাঙ্গা জংশন নয়, খুলনা পর্যন্ত মঙ্গলবার চালু হবে আরও অন্তত ছয়টি নতুন স্টেশন। এর মধ্যে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিরতি দেবে কাশিয়ানী জংশন, লোহাগড়া, নড়াইল, সিঙ্গিয়া জংশন ও নোয়াপাড়া স্টেশন।

আর রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস থামবে কাশিয়ানী জংশন, নড়াইল ও যশোর জংশন। ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল পৌনে ১১টায় যাত্রা শুরু করে বেনাপোল পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়। যেটি বেনাপোল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় ফিরতি যাত্রা করে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় পৌঁছাবে।

আর জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ভোর ৬টায় রওনা করে ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল পৌনে ১০টায়। ফের রাত ৮টায় ঢাকা স্টেশন ছাড়বে, যেটি রাত ১২ টার আগেই খুলনা পৌঁছাবে।

নতুন দুই জোড়া ট্রেন চলার খবরে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ দক্ষিণের কয়েকটি জেলার যাত্রীরা বেশ উচ্ছ্বসিত।

একজন যাত্রী বলেন, 'প্রথমত যাতায়াতে খুব সুবিধা হবে। এক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা থেকে চলে আসা যাবে। এরপর যাতায়াত খরচও কমবে।'

২৪ ডিসেম্বর দুই জোড়া ট্রেনের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত কমলাপুর স্টেশন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, 'শহরতলীর প্লাটফর্ম থেকেই এই ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের ট্রেন প্রস্তুত, প্লাটফর্ম প্রস্তুত, লাইন প্রস্তুত, আমরা প্রস্তুত। যাত্রীদের সুখের সাথে আমরা এ যাত্রায় সারথী।'

সাড়ে সাতশ' আসন সক্ষমতার ট্রেন দু'টির সাথে পরিচালিত হবে ল্যাগেজ ভ্যানও। নতুন পথে বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা আয় বাড়ার আশা রেলওয়ের।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, '১০০ কিলোমিটারের উপরে গতি থাকেবে এবং এটা নতুন লাইন। এবং যাত্রীদের যে রাইডিং কম্ফোর্ট, এটাও অনেক ভালো থাকবে। বছরে আমাদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।'

রেলওয়ে মহাপরিচালক বলছেন, নতুন পথে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমার পাশাপাশি সময় বাঁচবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, 'ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব হবে মাত্র ১৯৮ কিলোমিটার। এতে করে ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। এবং ভ্রমণ সময় যদি অরিজিনাল সময়ের সাথে তুলনা করি, তাহলে প্রায় সাগে ছয় ঘণ্টা সময় আমাদের সাশ্রয় হবে।'

তবে পুরোনো পথেই চলবে সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস।

এসএস