পটুয়াখালীর কলাপাড়ার প্রত্যন্ত এলাকা মিশ্রিপাড়া। ঐতিহ্যবাহী এখানকার তাঁত শিল্প। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে রাখাইন সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁত পণ্য বিক্রির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে সম্প্রতি নির্মিত মিশ্রি পাড়ার বৌদ্ধ মন্দির বদলে দিয়েছে রাখাইনদের ভাগ্যের চাকা। তাদের তৈরি পোশাক এখন দখল করছে শহরের বিভিন্ন বিপণি বিতান।
শীতের শুরু থেকেই পর্যটকরা মিশ্রি পাড়ার বৌদ্ধ মন্দির দেখতে ভিড় করেন। আর পর্যটন ঘিরেই এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পোশাকের দোকান। এগুলোতে বিক্রি হওয়া ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পোশাকই রাখাইনদের তৈরি।
নিপুণ বুনন শৈলীতে তৈরি পণ্যের মধ্যে রয়েছে লুঙ্গি, তোয়ালে, চাদরসহ নানাধরণের পোশাক। শীতের এক মৌসুমেই কোনো কোনো দোকানে ১০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয় বলে জানান দোকানিরা।
একজন দোকানি বলেন, ‘শীত আসলে আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। আমাদের এদিকে রাখান পল্লিতে বেচাকেনা ভালো হয় এই সময়।’
সাধারণ পোশাকের তুলনায় এখানকার তাঁতে তৈরি পণ্য দামে কম, মানসম্মত এবং টেকসই।
একজন ক্রেতা বলেন, ‘দাম আমাদের বাজেটের মধ্যে আছে। দাম বলতে গেলে কমই আছে। আমরা কিনতে পারছি, সমস্যা নেই।’
একসময়ের অজপাড়া এই গ্রামটি এখন হয়ে উঠেছে বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। পুরো মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ী।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ঐতিহ্যবাহী মিশ্রিপাড়া তাঁতপল্লীর সভাপতি মো. জমিস উদ্দিন বলেন, ‘শীতের মৌসুমে আমাদের এখানে ব্যবসাটা বৃদ্ধি পায়। সরকার যদি কুয়াকাটাকে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে তাহলে আমাদের ব্যবসারও প্রসার হবে এবং সরকারও এখান থেকে বড় ধরনের আয়ের একটা উৎস পাবে।’
আগের তুলনায় চাহিদা বাড়লেও তৈরি পোশাকের ন্যায্যমূল্য ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার দাবি কারিগরদের।
পটুয়াখালী কলাপাড়ার আমখোলাপাড়া রাখাইন কমিউনিটির সভাপতি মেথুচ রাখাইন বলেন, ‘শীতে আমাদের কাজ বাড়ে। এখন সুতাসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। সে তুলনায় আমরা লাভ পাই না। বাঙালি আমাদের কম টাকা দিয়ে কিনে বেশি টাকায় বেঁচে।’
পটুয়াখালীর ২৮টি গ্রামে কমবেশি ৩০৪টি রাখাইন পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে সবকটি পরিবারই তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত।