২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মানবিক পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতির মধ্যেই যুদ্ধকবলিত রাখাইন রাজ্যে চলছে দুর্ভিক্ষ, অনাহারে ২০ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের এ তথ্য প্রকাশের মাসখানেক পরই উন্মোচিত হলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হিংস্রতার আরেক রূপ।
একদিকে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে কঙ্কালসার, মৃত্যুমুখে অন্যদিকে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি- ডব্লিউএফপি'র দেয়া ত্রাণের বস্তা, টন টন চাল লুকোনো সেনাবাহিনীর বাঙ্কারে। রাখাইনের মংডু শহরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি'র পাঁচ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ঘাঁটিতে ডব্লিউএফপি'র চিহ্ন সম্বলিত কয়েক হাজার চালের বস্তা মিলেছে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডভিত্তিক বার্মিজ সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।
গেলো ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির আগ্রাসী আক্রমণে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইনের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হাতছাড়া হয় জান্তার সেনাদের। সে সময় বিজিপি পাঁচ ব্যাটেলিয়নের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের হাতে যাওয়ার পরই খোঁজ মেলে বিপুল পরিমাণ ত্রাণের। জানা গেছে, চালের বস্তা দিয়ে বাঙ্কার গড়েছিল সেনারা।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। ছয় মাস আগেই মংডুর একটি গ্রামে ডব্লিউএফপি'র গুদামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছিল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। বুধবার সংস্থাটি জানায়, চলতি বছর পুরো মিয়ানমারে ১৭ লাখ মানুষের খাওয়ার উপযোগী ত্রাণ সরবরাহ করেছে তারা।
শুধু ত্রাণ হাতিয়েই ক্ষান্ত হয়নি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রাখাইনের অভুক্ত শরণার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেতে চাইলেও রাজ্যের সীমান্ত আটকে সে পথ বন্ধ রেখেছে সেনাবাহিনী। নিকটবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা অভ্যন্তরীণ শরণার্থীদের যেন আশ্রয় না দেয়, সেজন্যও দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিজিমা বলছে, মাছ ধরেও খাওয়ারও অনুমতি নেই শরণার্থীদের।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৬টিতেই চলছে জান্তা ও আরাকান আর্মির তীব্র সংঘাত। এতে রাখাইনে বাস্তুচ্যুত প্রায় চার লাখ মানুষ। প্রতিবেশী চিন প্রদেশসহ উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা পৌনে ছয় লাখ।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শরণার্থীর চাপে জর্জরিত প্রতিবেশী দেশগুলোতে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের তিন প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভারত ও চীনসহ পাঁচটি দেশের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সদস্য থাইল্যান্ড। থাই সরকার জানায়, আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শীর্ষ কূটনীতিক।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিআমপোংসা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজেদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী বছর জনশুমারি, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও সর্বোপরি সাধারণ নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে দেশটি। ৫৩টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারের এ পরিকল্পনায় ছয় দেশই সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকক। সেনা অভ্যুত্থানে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অস্থির মিয়ানমার। গণতন্ত্রকামীদের প্রবল বিক্ষোভের পাশাপাশি তখন থেকেই দেশজুড়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলো বিভিন্ন গোষ্ঠী। গেলো বছরের অক্টোবর থেকে শুরু বিদ্রোহীদের সমন্বিত অভিযানে দেশের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।