প্রাচ্যের রানী, বন্দর নগরী নানা নামে পরিচিত হলেও বর্ষা মৌসুমে জলে ডুবে যায় দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম।
নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও শেষ হয়নি এখনও। দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটিতে। খাল খননসহ উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সিটি করপোরেশন আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বে সীমাহীন পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে নগর সরকার গঠনের দাবি নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের। এর আগে প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বার বার এই দাবি তুললেও বাস্তবায়ন হয়নি। নগর সরকার হলে এক ছাতার নিচে থাকায় পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন বর্তমান মেয়র।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'নগর সরকার হলে হতো কী, সমস্ত সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো এক ছাতার নিচে কাজ করতো। তাহলে সিটি করপোরেশন সবকিছু দেখভাল করতে পারতো। এবং মেয়র যেহেতু গণতান্ত্রিকভাবে হয়েছে, মানুষের ভোটে হয়েছে, কাজেই তার এটা অধিকার রয়েছে সবকিছু দেখভাল করার। এভাবে হলে পরিকল্পিত উন্নয়ন চট্টগ্রামে হতে পারতো।'
নগরীর হালিশহরে সবচেয়ে বড় ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহেশখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করে মেয়র জানান, বিগত ১৬ বছরে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। নগরবাসীকে বিনোদনের পাশাপাশি খালগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে মহেশখালীসহ ১২টি উন্মুক্ত স্থানে ওয়াকওয়ে ও বসার ব্যবস্থাসহ সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। খালের পাড়ে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা করতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মেয়র।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'খালের দুইপারে গ্রিন ব্রিজ থাকবে, ওয়াকওয়ে থাকবে। মানুষ এখানে হাঁটতে পারছে না। আমরা চমৎকার একটা ওয়াকওয়ে করে দিলে তারা খালের পাড়ে হাঁটতে পারবে। খালটাও একটা বিনোদনের জায়গা হিসেবে আমরা কাজ করছি। কোনো ধরনের দোকান, কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে এলাউ করা হবে না।'
নগরীর বিভিন্ন খাল পলিথিন বর্জ্য ও ময়লা-আবজনায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়। এ অবস্থায় পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাল ও উন্মুক্ত স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হবে বলে জানান প্রকল্পটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
ভিত্তি স্থপতি লিমিটেডের আর্কিটেক্ট ডিরেক্টর ইশতিয়াক জহির বলেন, 'ওয়াকওয়ে, ফুটপাত, বসার জায়গা গাছ দিয়ে সাজানো হবে। বিকেলবেলা যেন সুন্দর করে এই জায়গাটা সবাই এনজয় করতে পারে। আমাদের এই ব্যস্ত নগরীতে যেন শ্বাস খোলা একটা জায়গা থাকে। আমরা বড় জায়গা পাচ্ছি না, ছোট ছোট যা পাচ্ছি সেগুলোকেই আমরা মানুষকে আবার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছি।'
এক সময় চট্টগ্রামে প্রায় ৭০টির মতো খাল থাকলেও বর্তমানে অর্ধেকেরও অস্তিত্ব নেই।