একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সে সময় জামায়াতের অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের আইনি সহায়তা দিতে যোগাযোগ করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানের সাথে। তবে তাকে আটকে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
চলতি বছরের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচার কাজ শুরু হয়েছে।
এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষকে আইনি সহায়তা দিতে আমন্ত্রণ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আসেন ব্রিটিশ এই আইজনীবী।
আজ (বুধবার, ১১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সাথে বৈঠক শেষে তার অভিব্যক্তি জানাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টবি ক্যাডম্যান।
শুরুতেই ট্রাইব্যুনালের কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ভারতের উচিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শেখ হাসিনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া। তাকে আইন অনুযায়ী ফেরত আনারও সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনি পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘আমার তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়েছে। আমি তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট। তারা কাজটির উচ্চ পেশাদারিত্বের মান রক্ষা করা করেছে।’
ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে বিচার কাজ স্বচ্ছভাবে করা সম্ভব। প্রয়োজনে আরো সংশোধনী আনা যাবে বলে মনে করে এই ব্রিটিশ আইনজ্ঞ।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনি পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘আমি আগে থেকে কিছু বলতে চাই না যে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে অবশ্যই চিফ প্রসিকিউটর ও তার অফিস শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সামনে তুলে ধরবে এবং তাকে ফেরত আনার অফিসিয়াল অনুরোধ পাঠাবে। যদি তা প্রত্যাখান হয় তাহলে আমরা দেখব তাকে উপস্থিত করা ছাড়াই আইনি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যায় কিনা? এর জন্য প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেরও সাহায্য চাইব।’
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ করা হচ্ছে। যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না তাদের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানান টবি ক্যাডম্যান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনি পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘আইসিটি আইনের কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। মূলত আইনটি সংশোধন করা হয়েছে যাতে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা যায়।’
আর ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, আসামিপক্ষও চাইলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে যেসব ভুল গুলো হয়েছে সেগুলো যাতে আর না হয় এবং যাতে ফ্রি, ফেয়ার ও পক্ষপাতহীন ট্রায়াল হয় যা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিচার গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে টবি ক্যাডম্যান পরামর্শক হিসেবে সাহায্য করবেন।’
জুলাই আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ অর্ধশতাধিক নেতা, আমলা, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।