মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

সিরিয়ার নতুন শাসকের সঙ্গে হিসাবনিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেবে রাশিয়া

সিরিয়ার নতুন শাসকের সঙ্গে হিসাবনিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেবে রাশিয়া। এরই মধ্যে মস্কোর সিরিয়া রুশ দূতাবাসে নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে বিদ্রোহীরা। ইসরাইল বলছে, সিরিয়া ভূখণ্ডে স্বল্প সময়ের জন্য তাদের সেনা মোতায়েন থাকবে। তবে বিদ্রোহীদের কাছে সিরীয় সেনাদের এমন পরাজয় মেনে নিতে পারছে না ইরান। এমন অবস্থায় পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানিয়েছেন বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি।

আসাদ পরিবারের শাসন থেকে ৫০ বছর পর মুক্তি মিলেছে সিরিয়াবাসীর। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর মাত্র ১২ দিনেই দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা।

আসাদ প্রশাসনের নিষ্ঠুর শাসনামলের অবসানের পর এখন নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে সিরিয়ার জনগণ। গৃহযুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শরণার্থী সংকটে রূপ নেয় সিরিয়া। আসাদের পতনে প্রতিটি শহরের রাস্তায় উল্লাসে মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ।

আসাদের পতনের পর মস্কোতে অবস্থিত সিরিয়ার দূতাবাসে তিন তারকা খচিত নতুন পতাকা উড়িয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। প্রেসিডেন্ট আসাদকে রক্ষায় পাশে ছিল ইরান ও রাশিয়া।

এছাড়া, সিরিয়ায় কৌশলগতভাবে-গুরুত্বপূর্ণ দুটি রুশ সামরিক স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায়না রাশিয়া।

নতুন শাসকদের সঙ্গে আলোচনার করে সিদ্ধান্ত নেবে ক্রেমলিন। আর প্রেসিডেন্ট আসাদকে মানবিক কারণে রাশিয়ায় আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলেও জানান ক্রেমলিন মুখপাত্র।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সিরিয়ার ক্ষমতায় যারা আসবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যে এই বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। এর জন্য অবশ্যই সময় লাগবে।’

অন্যদিকে, ইসরাইল বলছে সিরিয়া ভূখণ্ডে তাদের বাহিনীর উপস্থিতি সীমিত সময়ের জন্য। কারণ বিদ্রোহীগোষ্ঠী ইসরাইলকে শত্রু মনে করে। তাই যে কোনো হুমকি ঠেকাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ জুলানি ও উগ্র ইসলামি সংগঠনের হাতে। আমরা তাদের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের একমাত্র স্বার্থ হল ইসরাইল ও আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া। ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট যেন চরমপন্থিদের হাতে না পড়ে তা নিশ্চিত করা হবে।’

এদিকে, আসাদ সরকারের পতন এখনো মেনে নিতে পারছে না ইরান। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদ্রোহীদের আক্রমণ মোকাবিলা করতে না পারা সত্যিই আশ্চর্যজনক। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়ে কখনো আলোচনা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘সিরিয়ায় চলমান আন্দোলন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিল ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা। সিরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনীকে সব তথ্যও জানানো হয়েছিল। আসাদ সরকারও সব বিষয়ে অবগত ছিল। এমন অবস্থায় তাদের পতন সত্যিই আশ্চর্যজনক।’

এদিকে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন বার্তা দিয়েছেন।

তেরোশ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক মসজিদে দেয়া বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলিমদের নিয়ে এতদিন ষড়যন্ত্র করেছে দেশি-বিদেশি শত্রুরা। এই বিজয় এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়।

তার অভিযোগ, খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতা, উস্কানি ও দুর্নীতি ছড়িয়েছে ইরান।

জুলানি আরও বলেন নিজের স্বার্থ উদ্ধারে সিরিয়াকে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন। তারা যেকোনো শক্তির পতন ঘটাতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কঠিন বার্তা জানিয়েছেন তিনি। তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের আখ্যা দিয়ে এখন আর ফায়দা লুটতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র।

প্রায় আড়াই কোটি জনসংখ্যার দেশ সিরিয়ার ৭০ শতাংশ সুন্নি মুসলমান। এছাড়া, দেশটিতে খ্রিষ্টান, কুর্দি, দ্রুজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

এএইচ