জেলা ও উপজেলা শহরে সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যেখানে আধুনিক সুবিধা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারেন গর্ভবতী মা ও শিশুরা। তবে প্রত্যন্ত এলাকার মা ও শিশুরা এই সুবিধা থেকে অনেকটা বঞ্চিত থাকেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চালু করেছে সরকার। এসব কেন্দ্রে বিনামূল্যে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু হবিগঞ্জ জেলার প্রায় সব কেন্দ্রেই জনবল সংকটের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এই যেমন মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সীমান্ত এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জন্য এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি ভরসার অন্যতম স্থান। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেখানে চিকিৎসা সেবা পান না রোগীরা। মাত্র একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সামলাচ্ছেন এত বড় কেন্দ্রটি।
হবিগঞ্জ জেলায় মোট ৫২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। বিশেষ করে প্রাইভেট হাসপাতালমূখি গর্ভবতী মায়েদের যেখানে সিজারে উদ্বুদ্ধ করা হয়, সেখানে এসব কেন্দ্রে শতভাগ স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে। প্রতিবছর জেলায় গড়ে সাড়ে ৮ হাজারে বেশি স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে।
প্রতিটি কেন্দ্রে ৬টি পদে কমপক্ষে ১০ জনের জনবল থাকার কথা। অথচ অধিকাংশ কেন্দ্র চলছে মাত্র ১-২ জন কর্মী দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৫২টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১০ জন, আর পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ১০১টি পদের বিপরীতে মাত্র ৬০ জন কর্মরত আছেন।
পইল স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নুরজাহান বেগম বলেন,বলেন, ‘একটা ডেলিভারির জন্য একজন মা যখন আসেন, তাকে রেখে কোথাও যাওয়া যায় না। সেখানে আমার মতো দুইজন অন্তত পরিদর্শিকা থাকার দরকার।’
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রোকসানা আক্তার বলেন, ‘একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন মেডিক্যাল অফিসার পদসহ একাধিক পদ খালি পড়ে রয়েছে আমাদের এখানে।’
জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
হবিগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাজনিত জটিলতায় কার্যক্রম আটকে আছে। তবে আমাদের অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব যাতে লোকবল দেয়া যায়।’
সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতি মাসে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহসহ এসব কেন্দ্র পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, জনবল সংকটের কারণে তা শতভাগ সফল হচ্ছে না।