নিভৃত পল্লির সবুজ প্রকৃতির ভেতর বিশাল জায়গাজুড়ে ফলবাগান। সারি সারি গাছ জুড়ে ঝুলছে রসে টইটম্বুর পাকা কমলার থোকা। রং ও আকার দেখে গাছ থেকে পছন্দমতো কমলা তুলে নিচ্ছেন ক্রেতা। ঘুরে ঘুরে এভাবে কমলা কেনার দৃশ্য বিদেশের মাটিতে দেখা মিললেও এ দেশে ব্যতিক্রম।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর গ্রামের চার উদ্যোক্তা ২০২১ সালে এই যাত্রা শুরু করেন। ১০ বছরের জন্য আট বিঘা জায়গা ইজারা নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে দেশ বিদেশ থেকে আনা উন্নত জাতের ১৫০টি দার্জিলিং ও ৫০টি চায়না ম্যান্ডারিন জাতের কমলার চারা রোপণ করেন। বাকি অংশে চাষ করেন বরই, আম, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফল। চলতি মৌসুমে বাগানের শতভাগ গাছে কমলার ফলন হয়েছে।
প্রতিদিন বাগানটিতে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। তাদের জন্য সারি সারি গাছের ভেতর হেঁটে বেড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ কেউ মুঠোফোনে বন্দি করছেন কমলা বাগানের স্মৃতি। বিশেষ করে কমলা বাগান ঘিরে ছোট্ট শিশুদের আগ্রহ একটু বেশি।
এ বাগানের কমলাগুলোর আকার ও রং বেশ আকর্ষণীয়, বাজারের কমলার চেয়ে স্বাদ এবং রসও অনেক বেশি। এ বছর প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ কেজি কমলার ফলন হয়েছে।
বাগানের পরিচর্যাকারী জানান, ৩০০ টাকা কেজি দরে ইতোমধ্যে প্রায় ১টন দার্জিলিং কমলা বিক্রি হয়েছে বাগান থেকে। আর নিজ হাতে ছিড়ে কমলা নিতে পারছেন বলে ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি।
বাগান পরিচর্যাকারী মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘এসব মাদার গাছ থেকে আমরা যে চারা গাছ তৈরি করছি, ফলের পাশাপাশি ক্রেতা ও দর্শণার্থীরা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করছেন।’
এ বছর উদ্যোক্তারা ফলবাগানটিতে শুরু করেছেন 'অ্যাগ্রো ট্যুরিজম'। দর্শনার্থীরা নামমাত্র মূল্যে টিকিট কেটে কমলাবাগান ঘুরে দেখতে পারেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট মূল্যে নিজ হাতে গাছ থেকে কমলা সংগ্রহ করে কিনতে পারছেন আগতরা। ক্রেতাদের কাছে তরতাজা ফল তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ বলে জানান উদ্যোক্তারা।
তাওয়াক্কালনা ফ্রুটসের উদ্যোক্তা মো. অলিউল্লাহ বাইজিদ বলেন, ‘একটা ফল আপনি খাবেন। খাওয়ার পর ভালো লাগলে আপনি কিনবেন। নাহলে প্রয়োজন নাই। কৃষি ট্যুরিজমের বিষয়টা হচ্ছে আমাদের এখানে দর্শণার্থীদের একটা শৃঙ্খলা এবং আগ্রহের জন্য।’
সূর্যের আলোকছটায় দোল খাওয়া পাকা কমলার ঝলমল বর্ণ উঁকি দিচ্ছে দেশের কমলা চাষের সম্ভাবনা।