রাতের আঁধার কাটিয়ে পুব আকাশে ভোরের সূর্য। হেমন্তের পাকা ধানের ডগার ফাঁকে উঁকি দেয় রাঙা আলো। তাতে ধীরে ধীরে ফিকে হয় অন্ধকার। তখনও কুয়াশার চাদরে ঢাকা উত্তরের জনপদ।
ভোরের আলোয় বরেন্দ্রের মাঠে মাঠে তখন মুক্ত দানার মতো জ্বলজ্বলে সোনা রাঙা শিশির বিন্দু। কিছুক্ষণ যেতেই হেমন্তের শীতল প্রকৃতিতে ঘটে প্রাণের উপস্থিতি।
ঠিক তখনই শিশির ভেজা ভোরে কাস্তে-কোদাল হাতে মাঠে নামে কৃষানের দল। পাশেই লাঙল দিয়ে হালচাষে ব্যস্ত বরেন্দ্রর চাষি। অগ্রহায়ণের এ সময়ে পরিপক্ব ফসল তোলার পাশাপাশি চলে নতুন আবাদের প্রস্তুতি।
ষড়ঋতুর বাংলায় হেমন্ত উৎসবের ঋতু। অগ্রহায়ণে নবান্ন, রোপা আমন ধান ঘরে তোলা ঘিরে তাই কৃষকের উচ্ছ্বাস। বেলা বাড়লে গ্রাম জুড়ে চলে পিঠা, পায়েস আর মিষ্টি খাওয়ার ধুম। আর দিন গড়িয়ে বিকেল হতেই খেঁজুরের গাছ ঘুরে রস সংগ্রহে বাড়ে গাছির ব্যস্ততা।
দিগন্তজোড়া মাঠ। তার একপাশে পাঁকা ধানের গাদা আর অন্যপাশে খেজুর গাছের সারি। সেই পাঁকা ধান আর মিষ্টি রসের ঘ্রাণে তাই গাছির কণ্ঠে ওঠে আনন্দের সুর। হেমন্তে পাকা ধান, নানা ফল-ফসলের আবাদ আর খেজুর গুড় ঘিরে চাঙা হয় বরেন্দ্র অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে হেমন্ত আসে আশীর্বাদ হয়ে। নবান্নের শস্য, পিঠা-পুলি আর নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সমৃদ্ধ করে এ জনপদকে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘শীত শুধু একটা ঋতু হিসেবে আসে না, অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের কৃষকদের জন্য একটা নতুন সময় নিয়ে আসে। সেদিক থেকে শীত আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ হিসেবেই আসে।’
বছর শেষে মহাজনের ঋণ পরিশোধে কৃষকের হাসি আর সারা বছরের অন্নের জোগানও হয় এই সময়। বাংলার ঘরে ঘরে হেমন্ত তাই সুখ-সমৃদ্ধি কাল।