পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের মুক্তি, শেহবাজ সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দেয় পিটিআই। ইমরানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গেল রোববার ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা করে পিটিআই নেতাকর্মীসহ লাখো জনতা।
হাজারো মানুষের বিক্ষোভ ঠেকাতে পথে পথে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী মোতায়েন এবং শিপিং কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় রাজধানীর প্রবেশপথ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীকে। নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা পেরিয়ে এবং কনটেইনার ডিঙিয়ে বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদে ঢুকে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন।
স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাতে হুট করে শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। আটক করা হয় পিটিআইয়ের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দাবি, প্রাণ ভয়ে বিক্ষোভকারীরা পালিয়েছেন। দলের সমর্থকদের একা ফেলে ইসলামাবাদ ত্যাগ করেছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আমিন আলী গান্দাপুর। তবে তারা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের শীর্ষ এক নেতা। যদিও বুশরা বিবির বোনের দাবি তারা এখনো আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ইসলামাবাদেই আছেন।
বুশরা বিবির বোন মরিয়ম রিয়াজ ওয়াট্টো বলেন, ‘পাকিস্তানের গণমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করা হচ্ছে। বুশরা বিবি ইসলামাবাদে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গেই আছেন। ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ডি-চকেই থাকবেন। জীবনের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করেছেন বুশরা বিবি।’
এদিকে, পিটিআই সমর্থকেরা পিছু হটলে তাদের বিক্ষোভ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পুনরায় যেন আন্দোলন সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে দেয়ার কথা বলেছে ইসলামাবাদ প্রশাসন। স্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশ করলে কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট একটি জটিল মুহূর্তে দাঁড়িয়েছে। ইমরান খানের পরিবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ। ইমরানের জনপ্রিয়তায় এবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক মারভিন ওয়েইনবাউম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে পিটিআইয়ের উত্থান হতে পারে। ইমরানের জনপ্রিয়তা ও তাদের আন্দোলন দমাতে সামরিক প্রচেষ্টাও চালানো হতে পারে। এছাড়া পাকিস্তানের সংকট সমাধানে আর কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না আপাতত। সেনাবাহিনীও এখন চাপে আছে।’
যদিও, পিটিআইয়ের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তাদের ৮ সদস্য এবং আহত হয়েছেন আরও অর্ধশত কর্মী। ইমরান খানের নির্দেশনায় শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানায় দলটি।